জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তিনি। এই শিক্ষার্থী ঢাকায় টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা, বাসা ভাড়া ও খাবার খরচ জোগাতেন। দরিদ্র কৃষক পরিবারের এ সন্তান মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের কাছেও টাকা পাঠাতেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে দেশ কার্যত লকডাউন। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে সংগ্রামী এই শিক্ষার্থীর ওপরেও। তার দুটি টিউশনি বন্ধ। চলতি মাসের বাসা ভাড়ার টাকা দেয়ার আগেই খাবার টাকা শেষ হয়ে গেছে তার। এ পরিস্থিতিতে বাড়ি যাওয়ারও উপায় নেই। নিরুপায় হয়ে এ শিক্ষার্থী দ্বারস্থ হন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কিছু শিক্ষার্থীর। কিন্তু তাদের দেয়া আর্থিক সহযোগিতায় কয়েক দিনের খাবারের ব্যবস্থা হলেও বাসা ভাড়ার টাকা বাকি থাকবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন অসহায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা কয়েক শিক্ষার্থী জানান, অনাবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরি, প্রকাশনা সংস্থায় প্রুফ রিডিংসহ বিভিন্ন কাজ করে পড়াশোনার কাজ চালান। কিন্তু করোনার ছুটিতে তাদের এসব খণ্ডকালীন কাজেরও ছুটি হয়েছে। চলতি মাসের বেতনও দেয়নি অনেকে। ফলে বাড়ি ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। যারা ঢাকায় আছেন তাদের অনেকের খাবার টাকা শেষ। প্রকাশ্যে কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। সাধারণ ছুটিতে এ কাজটি বন্ধ। তার পরিবারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়ার উপায় নেই। এ অবস্থায় তাদের খাবারের টাকাও নেই।
দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী মিরপুরে টিউশনি করে চলতেন। পরিবারে তার বাবা সংসার চালান। তারা তিন ভাই ও এক বোন পড়াশোনা করেন। এ অবস্থায় কাজ বন্ধ থাকায় তাদের বাড়িতে খাবারের ব্যবস্থা করাই কঠিন হয়ে গেছে। অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর বাবার হার্টের সমস্যা। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। এ অবস্থায় কোথাও কোনো কাজ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুল বাকি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী সমস্যায় আছে, তারা বিভাগীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। বিভাগীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, যে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় খাবার ও বিভিন্ন সমস্যায় আছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।