রাজশাহী অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে অভিনব প্রতারণায় নেমেছে একটি চক্র। দেশের সব উপজেলায় একটি করে এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রচার করছে চক্রটি। রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে তাদের প্রতারণার জাল বিস্তারের চেষ্টা চলছে। আর এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে রাজশাহীর শিক্ষিত ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে নিজ এলাকায় জমি সংগ্রহের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগেরও চেষ্টা চালাচ্ছে চক্রটি। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে নতুন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি ও সুপারিশের জন্য চেষ্টা চলছে। বুধবার (১৭ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রফিকুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এ ব্যাপারে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছেও কয়েকজন গত দুই-তিন মাস ধরে ডিও লেটারের জন্য ঘোরাঘুরি করছেন। আমার দুই উপজেলায় দুটি মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য একাধিক আবেদন নিয়ে ঘুরছেন অনেকেই। অথচ সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমার জানা নাই। কিন্তু এরপরেও কিছু লোক এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য আমার কাছে ঘুরছেন। কেউ কেউ এরই মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীও নিয়োগ দিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু কারা এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমতি দিল, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। তা নাহলে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন।’
নাটোরের একজন এমপি জানান, এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে এরই মধ্যে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে সরকার এই ধরনের প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না—তা জানেন না তিনি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোথাও কোথাও এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার চারঘাটের নন্দনগাছিতেও এই ধরনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের নাম একটি ওয়েবসাইটে দেখা গেছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের হাত ধরেই এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মুক্তিযোদ্ধা স্কয়ার প্রকল্পটি সরকার হাতে নেয় বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান মজনুর নাম। তবে বিষয়টি নিয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা দাবিদার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমি ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে পারব না। আমার ওয়েবসাইটে সব বিস্তারিত আছে। সেখান থেকে তথ্য নিতে পারেন। সরকারের কথাও বলা আছে সেখানে।’
অন্যদিকে রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সরকার থেকে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কোনো প্রকল্প শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেই। কিন্তু এরপরেও এই প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ডিও লেটার দাবি করছেন। তাই এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করছি।’