টেস্টে ফেল করাদের নিয়ে শিক্ষকদের ‘টিসি ব্যবসা’ বন্ধ

রুম্মান তূর্য |

টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টিসি ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন কতিপয় প্রধান শিক্ষক ও তাদের সহযোগী দালালরা। এবার সেই রাস্তা বন্ধ করে দিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। টেস্ট পরীক্ষার পর দশম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীকে এখন থেকে টিসি দেয়া যাবে না। বোর্ডের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। 

বোর্ড কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষার্থীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বোর্ডের অনুমতি ব্যতিত ছাড়পত্র দিতে পারবেনা। ১০ম শ্রেণিতে নির্বাচনী পরীক্ষার পর কোন অবস্থাতে ছাড়পত্র দেয়া হবে না।

এছাড়া পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন কেরতে পারবে না বলেও জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। কেবল শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান টেস্টে ফেল করা শিক্ষার্থীদের টিসি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মাধ্যমে বেশ কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। আবার অনুমতি বা স্বীকৃতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদেরও টাকার বিনিময়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বলে দাবি করেন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান। তারা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হিসেবে তাদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম পূরণ করিয়ে নিতে চান। 

গত ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু আগের দিন বিকেলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এরকম কিছু শিক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড গ্রহণে বোর্ডকে চাপ দেন। এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই ছিলেন অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে টিসি নেয়া ও অনুমতি বা স্বীকৃতিবিহিন প্রতিষ্ঠানের। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বোর্ডে বিধিবহির্ভূত চাপ প্রয়োগ করে প্রবেশপত্র নেয়ার অপচেষ্টা চালানোয় ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছিল ঢাকা বোর্ড। আর অনুমতি বা স্বীকৃতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বন্ধ ও টেস্টে ফেল করা শিক্ষার্থীদের টিসি বন্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে শিক্ষা নিয়ে চলমান এসব ব্যবসা বন্ধ হল।  

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোন শিক্ষার্থীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বোর্ডের অনুমতি ব্যতিত ছাড়পত্র দিতে পারবেনা। ১০ম শ্রেণিতে নির্বাচনী পরীক্ষার পর কোন অবস্থাতে ছাড়পত্র দেয়া হবে না। ১ মার্চ হতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সব ছাড়পত্রের আবেদন অনলাইনে করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বোর্ডের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম অবশ্যই শেষ করতে হবে। কেবলমাত্র শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি পাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। কোচিং সেন্টার বা বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান-যাদের পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি নেই, এমন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোন অবস্থাতে বোর্ডে আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেনা। আর স্বীকৃতি বা পাঠদানের অনুমতি পাওয়া কোন নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পরবে না। এ আদেশ অমান্য করা হলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বোর্ড আরও জানায়,  প্রাথমিকভাবে ১০০ জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। পরবর্তীতে শ্রেণি শাখা খোলার অনুমতি থাকলে প্রতি শাখার জন্য আরও ৫০ জন করে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এক্ষেত্রে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করার সময় শ্রেণি শাখা খোলার অনুমতিপত্র সাবমিট করতে হবে। বোর্ড যেসব প্রতিষ্ঠানকে শাখা কিংবা বিষয় বা বিভাগ খোলার অনুমতি দিয়েছে শুধুমাত্র সেসব শাখা কিংবা বিষয় বা বিভাগে শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। বোর্ডের অনুমতিপ্রাপ্ত শাখা কিংবা বিষয় বা বিভাগ ছাড়া অন্য কোন শাখা বিষয় বা বিভাগে শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করার ফলে কোন জটিলতা সৃষ্টি হলে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বহন করতে হবে।

 

আরও পড়ুন: 

পাঠদানের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন নয়

ফরম পূরণে অনিয়ম : ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করলো ঢাকা বোর্ড


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003046989440918