আসন্ন ঢাকা বিশ্বেবিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চলে দ্বিতীয় দিনের মতো মনোনয়নপত্র বিতরণ। তবে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল প্রধান ছাত্রসংগঠনগুলো এখন পর্যন্ত দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ঘোষণা না দেওয়ায় প্রথম দিনের মতো কোনো তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের প্রাধ্যক্ষ্যের অফিসের সামনে ছিল না মনোনয়ন সংগ্রহকারীদের ভিড়। তবে মনোনয়নপত্র না নিলেও ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছিল ছাত্রসংগঠনগুলো। মধুর ক্যান্টিনের আড্ডা, মিছিল, লিফলেট তৈরি আর প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
বুধবার সকালে ‘রাজনীতির আঁতুড়ঘর’ খ্যাত মধুর ক্যান্টিনে ভিড় জমাতে থাকেন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও বামধারার সংগঠনগুলোসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সকালে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নেতা-কর্মীসহ মধুর ক্যান্টিনে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা থেকে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন। পরে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী প্রায় ২০-২৫ জন কর্মীসহ মধুর ক্যান্টিনে আসেন। দুপুর প্রায় দেড়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান শেষে চলে যান তারা।
অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের পাশাপাশি এ দিন মধুর ক্যান্টিনে ছিলেন ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোটে’র অন্তর্ভুক্ত বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে দুই একজনকে জোটের পক্ষে নির্বাচনী লিফলেট তৈরি করতেও দেখা যায়। এদিকে মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর প্রথমবারের মধুর ক্যান্টিনে আসে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। এ সময় সংগঠনটির প্রায় ১০-১২ জন নেতা-কর্মী তাদের সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে দুপুরে মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আগামীকাল (আজ) সম্ভব না হলেও ২২ তারিখ নেওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্যদিকে ছাত্রদল মনোনয়ন নেওয়ার বিষয়ে তাদের আগের বক্তব্য অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদলের বিশ্বেবিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার বলেন, আমরা ২৫ তারিখ পর্যন্ত দেখব। আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। ‘দাবি মানা না হলে সে ক্ষেত্রে কী করবেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবতে চাই।
এদিকে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর দুই জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্র জোট’ ও ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য’ জোটবদ্ধভাবে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এই দুই জোটের মনোনয়নপত্র নেওয়ার বিষয়ে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, প্যানেল গঠনের বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। সেটা চূড়ান্ত হওয়ার পর আমরা একসঙ্গে মনোনয়নপত্র নেব।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ আগামী ২২ বা ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে মনোনয়ন ফরম নেওয়া শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরু।
হলের বাইরে ভোটকেন্দ্রের দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি : এদিকে হলের বাইরে বিভিন্ন অনুষদে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে মিছিল ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। বুধবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিন থেকে একটি মিছিল বের করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে যায়।
সেখানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দেয় সংগঠনটি। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘ছাত্র ফেডারেশন পরিচালিত গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে তিন হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র চেয়েছে।’ এ সময় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভোট কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরসহ সাত দফা দাবি নাগরিক ছাত্র ঐক্যের : আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ভোট কেন্দ্র হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে নাগরিক ছাত্র ঐক্য। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ আকন্দ। এ সময় এস এম এ কবীর হাসান, শাকিব হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিক ছাত্র ঐক্যের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সব দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া ও বাস্তবায়ন করা, সব প্রার্থীর সমান প্রচারণার সুযোগ নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসে সব সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্থায়ী সহাবস্থান নিশ্চিত করা। শরীফ আকন্দ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ঐতিহ্য এবং শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, ছাত্রছাত্রীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেবে নাগরিক ছাত্র ঐক্য।