ডাকসু নির্বাচন কি আসলেই করতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?

সাইয়েদা আক্তার |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে গত রোববার জানিয়েছিল সামনের বছরের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচন। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২৮ বছর আগে। ফলে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করায় সেটি নিয়ে আলোচনা ও উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘোষণাটি দিয়েছিল উচ্চ আদালতের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে। ঐ রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ ছিল। কিন্তু নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়ার পরদিনই উচ্চ আদালতের এই রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ডাকসু নির্বাচন করার ব্যপারে কর্তৃপক্ষ কি আসলেই আন্তরিক? ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, অর্থাৎ যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে পরিচালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তাতে বলা আছে প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ডাকসু একটি ধারণা মাত্র। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট সাতবার অনুষ্ঠিত হয়েছে ডাকসু নির্বাচন। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে।

ফলে এই  মুহূর্তে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ডাকসু একটি ধারণা মাত্র, যার কথা তারা শুনেছেন, কিন্তু জানেন না কিভাবে কাজ করে সেটি।

"ডাকসু একটা 'অ্যাবসেন্ট এক্সিসটেন্স' আমাদের কাছে, এর কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি দুই বছর হলো, এখনো ডাকসুর কোন অস্তিত্ব দেখিনি।"

"হলে তো প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা সিট পায় না, সেজন্য ক্ষমতাসীন দলের মাধ্যমে উঠতে হয়, পরে তাদের কথামত চলতে হয়। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হলে এটা হবে না।"

"ডাকসু হলে হয়তো আমাদের একটা 'ভয়েস' তৈরি হবে, আমরা নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলতে পারব।" এভাবেই ডাকসু নিয়ে তাদের ভাবনার কথা বলছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ডাকসু নির্বাচন ও নেতৃত্ব নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির যোগ আছে বলে মনে করা হয়। সে কারণেই এই নির্বাচন নিয়ে সবার আগ্রহ।

এই নির্বাচনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ দাবী জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে ১৬ই সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোকে নিয়ে পরিবেশ পরিষদের বৈঠক হয়।

বৈঠকের পর উপাচার্য জানান, মার্চে ডাকসু নির্বাচন হতে পারে। এজন্য অক্টোবরের মধ্যে ভোটার তালিকার খসড়া প্রণয়ন করা সম্ভব বলেও তিনি জানান। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলছেন, নির্বাচনের জন্য তারা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

"আমরা বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে ও হলে যাচ্ছি, সেখানে মেধাবী, জনপ্রিয় ও শিক্ষার্থীদের যে কোন সমস্যায় কাছে পায় এমন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বাছাই করার চেষ্টা করছি যাদের আমরা ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে পারি।"

কিন্তু নির্বাচনে অংশ নেবার প্রাথমিক শর্ত সব ছাত্র সংগঠনের ক্যাম্পাসে উপস্থিতি, তাও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অনুপস্থিত।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলছেন, সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান ছাড়াও আরো সমস্যা রয়েছে ক্যাম্পাসে, যা নিরসন করা না গেলে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব হবে না।

"যেসব সমস্যার কারণে আগে নির্বাচন হয়নি, সেগুলো সমাধান করতে হবে। হলগুলোতে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান, সবার সম-রাজনৈতিক চর্চার সুযোগ, এমন একটা সংস্কৃতি যেখানে মতের ভিন্নতা থাকলেও একসঙ্গে বসে যেকোন সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারা এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।"

"সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষের যে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার মানসিকতা সেটাও ছাড়তে হবে। " এদিকে, ১৭ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ নির্বাচনের সময় ঘোষণার পরের দিনই, ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে পদক্ষেপ নিতে উচ্চ আদালতের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

আর এর পরে প্রশ্ন ওঠে ডাকসু নির্বাচনের ব্যপারে কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিক? কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান অবশ্য সে অভিযোগ মানতে চাননি

"আদালতের নির্দেশনা আমরা বিবেচনায় রেখেছি। তার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরও আমাদের এ নিয়ে বলেছেন। কিন্তু কথা হলো ২৮ বছর নির্বাচন হয়নি এটা একটি বাস্তবতা। ফলে এখন যাতে নির্বাচন করা যায়, সেটাই বিবেচনা।" আর আদালতের রায় স্থগিত করার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আদালতের যেহেতু একটা নির্দেশনা আছে, সেটা সময়মত না করলে 'কনটেম্পট' বা আদালত অবমাননা হয়ে যায়, সেকারণে আদালতকে জানানো যে আমরা ডাকসু নির্বাচনের জন্য কি করছি এবং নির্বাচন করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।"

২০১২ খ্রিস্টাব্দ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ২৫ জন শিক্ষার্থীর করা রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ বছরের ১৭ই জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেয়, যেখানে ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এছাড়া গত বছরের নভেম্বরে একজন ছাত্র উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে অনশন করেছিলেন।

সৌজন্যে : বিবিসি 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029690265655518