ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে। মনোনয়নপত্র বিতরণ চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আজ প্রথম দিনে বড় কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এদিকে আসন্ন এ নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য স্বতন্ত্র জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে গতকাল সোমবার। একই দিনে জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল তাদের খসড়া প্যানেল ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে ছয় দফা দাবিতে গতকাল উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বুধবার সরকারি সফর শেষে দেশে ফিরবেন। তার সঙ্গে আলোচনা করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবে ছাত্রলীগ।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান জানান, এখনই তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন না। সাত দফা দাবিতে তাদের আন্দোলন চলছে। এ নিয়ে আজ উপাচার্য ও ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলবেন এবং দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানান আকরামুল। গতকাল সোমবার চতুর্থ দিনের মতো নেতাকর্মীদের নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী। কী ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে- জানতে চাইলে আকরামুল হাসান বলেন, এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে না, যাতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক থাকতে চান জানিয়ে ছাত্রদলের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ক্যাম্পাসে টেকসই সহাবস্থানের জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। প্রশাসন একগুঁয়ে আচরণ অব্যাহত রাখলে এর প্রতিবাদ জানানো হবে।
স্বতন্ত্র জোটের আত্মপ্রকাশ : গতকাল সোমবার দুপুরে টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ জোটের তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী অরণি সেমন্তি খান। তিনি বলেন, একটি স্বতন্ত্র প্যানেলের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ডাকসু নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় আপাতত প্রার্থীদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেমন্তি বলেন, সাহস, মেধা ও দক্ষতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে কোনো শক্তি তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।
সেমন্তি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রথাগত সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার বৃহৎ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা 'চায়ের কাপে ডাকসু' আয়োজন করেছেন। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে তারা অনেক সহপাঠীর সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন; যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কাঠামো নিয়ে নাখোশ এবং পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে চান।
# বিসিএলের খসড়া প্যানেল ঘোষণা : গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য খসড়া প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল। জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) সমর্থিত এই ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম শীলসহ নেতাকর্মীরা।
বিসিএলের ঢাবি শাখার সভাপতি মাহফুজুর রহমান রাহাতকে ভিপি এবং সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহমান বিজয়কে জিএস পদে প্রার্থী করা হয়েছে। অন্য প্রার্থীরা হলেন- সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নাঈম হাসান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক শিরিন আক্তার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক তন্ময় কুমার কুণ্ড, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ফজলে এলাহী জিসান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত রাহী, সাহিত্য সম্পাদক আদনান হোসেন অনিক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রোমান, ক্রীড়া সম্পাদক মাহবুবুর রহমান হাবিব, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক এহসানুল হক হিমেল, সমাজসেবা সম্পাদক আল-আমিন সিকদার। সদস্য পদে প্রার্থী সাদেকুর রহমান সাগর, মশিউর রহমান জারিফ, সংগ্রামী মোহন উচ্ছ্বাস, আশরাফুল আলম ফাহিম, মো. নাবিদ নেওয়াজ, মাশফিক আরেফিন, রিফাত বিন মোক্তাসিম আহমেদ, তৌফিক আহমেদ, শাকিব ওয়ালিদ তৌহিদ, রাহাত আরা রুমি, মেহেদি হাসান, এসএম সামিউল বাশার সিদ্দিকী পার্থ এবং আরাফাত আহমেদ নাইম।
# উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও : ছয় দফা দাবিতে গতকাল উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করেছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনের দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিন থেকে দুই জোটের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির বলেন, প্রায় ১১টি সংগঠনের দাবি অগ্রাহ্য করে হলে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনকে চার দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হলেও তারা কথা শোনেনি। দাবি মানা না হলে গণতন্ত্রমনা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি মাসুদ রানা, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা প্রমুখ।