ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দিতে ভেতরে ভেতরে কাজ শুরু করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা এ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্যানেলগুলো চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি তা জমা দিতে হবে। এ অবস্থায় ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতে খুব বেশি সময় নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র সংগঠনগুলো প্যানেল ও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। জোটবদ্ধ হওয়ার জন্য একে অপরকে আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আসন্ন এ নির্বাচনে সংগঠনগুলো সমমনাদের সঙ্গেই প্যানেল করবে বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং দাবির সঙ্গে একমত পোষণকারীরা একত্রে প্যানেল করবে।
প্যানেলের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, ডাকসু নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখের সঙ্গে সমন্বয় করে প্যানেল চূড়ান্ত করার কথা ভাবছেন তারা। এ নিয়ে তাদের প্রাথমিক কাজ চলছে। আর প্যানেলে কে আসবে কি আসবে না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা, স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে ছাত্রলীগ কাজ করছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ জনপ্রিয় সংগঠন, এটি ব্যক্তিনির্ভর নয়। তাদের প্যানেলে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন, টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করা আন্তর্জাতিক সংগঠন, পাহাড়ি শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, আনুপাতিক নারী শিক্ষার্থী ও অরাজনৈতিকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সফল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম ছাত্র সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী বলেন, প্যানেলের বিষয়ে তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। গণতান্ত্রিকভাবে যারা ক্যাম্পাস-বান্ধব ও শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, দলীয় মতামতের ভিত্তিতে তাদের নিয়েই প্যানেল তৈরি করবেন তারা। আর উপযুক্ত সময়েই প্যানেল ঘোষণা করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য বলেছিলেন। কেননা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নাকি স্থায়ী- সেটা এখনও পরিস্কার নয়। তারা এখনও আবাসিক হলে যেতে পারেননি।
ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব দাস বলেন, প্যানেলের বিষয়ে তাদের আলোচনা চলমান। জোটভুক্তভাবেই তারা নির্বাচনে যাচ্ছেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে 'প্রগতিশীল বাম গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য' নামে জোট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোটভুক্ত সংগঠনগুলো ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সঙ্গে জোট করা হবে। তিনি আরও জানান, রোববার (আজ) টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবেন। নীতিগতভাবে যে দুই জোটের সঙ্গে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে তারা একমত। টিএসসির সংগঠন ছাড়াও অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে তাদের বসার কথা রয়েছে। এতে বাকি সংগঠনগুলোর সঙ্গে কীভাবে কাজ করা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, রোববার (আজ) বিকেল ৪টায় টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে তারা বিভিন্ন সংগঠনকে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। এক্ষেত্রে আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ও টিএসসির ২২টি সংগঠন উল্লেখযোগ্য। তারা ১১ দফার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। এর পক্ষে যারা একমত পোষণ করবেন, ডাকসু নির্বাচন তারা তাদের প্যানেলে যুক্ত করবেন। এ জন্য রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় রাখা হবে। এরপর রাতে তারা বসবেন। কে কে তাদের সঙ্গে থাকবেন, সেটা রাতেই বলা যাবে। প্যানেলে কে কোন অবস্থানে থাকবেন, সেটা ঠিক করতে আরও দু'দিন সময় লাগতে পারে। ২০ তারিখের মধ্যেই তাদের প্যানেল সম্পর্কে জানা যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম- বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির আগেই তাদের প্যানেল চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত এককভাবে প্যানেল দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। তবে কোনো হলে যদি তারা পূর্ণ প্যানেল দিতে না পারেন, সেক্ষেত্রে যতজন সম্ভব প্রার্থী দেবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাদের সঙ্গে যারা সক্রিয় ছিল, তাদের নিয়ে প্যানেল গঠন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যারা তাদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের নিয়ে সমন্বয় করে তারা প্যানেল দেবেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী বলেন, এরই মধ্যে তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। রোববার (্আজ) ছাত্র ইউনিয়ন তাদের ডেকেছে। এরপর আবারও ছাত্রলীগের সঙ্গে বসবেন। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে দুই-একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা। তবে প্যানেলের ক্ষেত্রে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে যাবেন না। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে তারা যেতে পারেন।
সূত্র: সমকাল