ডাকসুর সাবেক হয়েও ঢাবি সিনেটে বহাল থাকছেন যাঁরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ কমিটি (নুরুল-রাব্বানী) ভেঙে গেছে৷ তবে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডাকসুর ‘মনোনয়নে’ বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি হওয়া পাঁচ নেতা তাঁদের উত্তরসূরি (পরবর্তী সিনেট সদস্য) আসা পর্যন্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন৷ সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটি তাঁরা পাবেন নিজেদের ছাত্রত্ব থাকা পর্যন্ত৷ মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আসিফ হাওলাদার।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই পাঁচ নেতা হলেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন৷ এই পাঁচজনের এখনো ছাত্রত্ব আছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২০ (২) ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিরা এক বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন৷ কিন্তু নির্বাচন, মনোনয়ন কিংবা নিয়োগের মাধ্যমে উত্তরসূরি আসার আগ পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন৷ তবে শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে থাকলে তাঁদের সিনেট সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে৷ অধ্যাদেশের ২০ (ঠ) ধারা অনুযায়ী, ডাকসু-মনোনীত শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হন৷

২৩ জুলাই সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন (বাজেট সভা) সামনে রেখে সদস্যপদ থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি৷ তাঁরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে চিঠির মাধ্যমে তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া চলছে৷

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই সবকিছু করা হবে৷

এর আগে গত বছরের মার্চে ডাকসু নির্বাচনের পর জুনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে মনোনয়ন দেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান৷ তবে ডাকসুতে আলোচনা না করেই অনির্বাচিত রেজওয়ানুল ও সনজিতকে সিনেট সদস্য করায় তখন বেশ সমালোচনা হয়েছিল।

এরপর দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়ার দুদিনের মাথায় ‘ব্যক্তিগত সমস্যার’ কথা বলে সিনেট থেকে পদত্যাগ করেন রেজওয়ানুল৷ পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন রেজওয়ানুলের স্থলাভিষিক্ত হন৷

ডাকসুর পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দীর্ঘ ২৯ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডাকসুর কমিটি ভেঙে গেছে৷ অর্থাৎ, নুরুল-রাব্বানী-সাদ্দামেরা সাবেক হয়ে গেছেন৷ তবে নুরুল ও রাব্বানী পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এবং ‘অসমাপ্ত কাজ’ সমাপ্ত করার যুক্তি দেখিয়ে দায়িত্বে থাকার আগ্রহ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন৷ যদিও মেয়াদ শেষে পদে থাকাকে ‘অনৈতিক’ বলেছেন সাদ্দাম৷

করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় চার মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বন্ধ আবাসিক হলগুলোও। যদিও ‘সীমিত সামর্থ্য’ নিয়ে চলছে অনলাইন ক্লাস৷ এমন পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই৷

কিন্তু ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা কিংবা ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ এ নিয়ে সন্দিহান ডাকসুর সদ্য সাবেক নেতারাও৷ তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবশ্যই আয়োজন করতে হবে ডাকসু নির্বাচন৷

ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক বলছেন, নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে গত মার্চের শুরুতে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল৷ তবে উপাচার্য নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু তো বলেনইনি, বরং বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন৷ সরকারও আর ডাকসু নির্বাচন চাইছে না বলে তিনি মনে করেন৷

নুরুল হক বলেন, ‘ভিপি হিসেবে আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনেকবার বলেছি যে ডাকসুর পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কিছু বলুন৷ কিন্তু কথা শুনে মনে হয়েছে, তিনি নির্বাচন দিতে চান না৷ ডাকসু নিয়ে আসলে সরকারেরও কনসার্ন থাকে৷ সরকারও আর ডাকসু নির্বাচন চাইছে না বলেই হয়তো উপাচার্য এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না৷ কিছু বললে হয়তো তিনি চাপে পড়তে পারেন, তাই অস্পষ্ট কথা বলছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থী, ছাত্রসংগঠনসহ অন্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করব, যাতে প্রশাসন চাইলেও ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবে না৷ গতবারও চাপে পড়েই প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছিল৷’

নুরুল বললেন, ‘আমরা ডাকসুর দায়িত্ব ছাড়িনি৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ব না৷ ডাকসুর কক্ষের চাবিটা এখনো আমার কাছে আছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সম্মেলন ডেকে, ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে পরামর্শ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছাড়ব৷ ডাকসু নির্বাচন আমরা আদায় করেই ছাড়ব৷’

এ ব্যাপারে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যথানিয়মে ও যথাসময়ে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032639503479004