করোনা সন্দেহে এক যুবককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে জ্বর-সর্দি নিয়ে হাসপাতালে এলে তাঁকে করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে নেয়া হয়। নীলফামারীর সৈয়দপুরের এই বাসিন্দা ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি হাসপাতালে এক রোগীর সঙ্গে ছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন স্বপন চৌধুরী।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই রোগীর জ্বর-কাশি ছিল। বর্তমানে একটু শ্বাসকষ্ট রয়েছে। তিনি করোনায় আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধিদল রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা নিয়ে ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে নতুন করে হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি হওয়ার খবরে রংপুরে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জ্বরসহ সর্দি-কাশি নিয়ে বিপাকে পড়েছে রোগীরা। চিকিৎসকরা তাদের দেখছেন না। ভয়ে হাসপাতালে রোগী সুস্থ হওয়ার আগেই ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে। আবার হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে আসা রোগীদেরও সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতার জন্য রংপুরে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। রংপুর মহানগরে রাস্তাঘাটসহ জনসমাগম এলাকাগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ শুরু করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি)। সব মিলিয়ে সুদিন ফিরবে এমন আশায় দিন গুনছে রংপুরবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর নগরের সদর হাসপাতালের পাশে নবনির্মিত ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালে টানানো হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড লেখা ব্যানার। বাইরে থেকে সুসজ্জিত হলেও ভবনের ভেতরের চিত্র ঠিক উল্টো। ভবনের ভেতর কাজে ব্যস্ত নির্মাণ শ্রমিকরা। ২০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের কথা বলা হলেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে মাত্র তিনটি বেড। তাও এখনো অপরিচ্ছন্ন। করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহজনক রোগীদের চিকিৎসাসেবায় আপাতত শিশু হাসপাতালটি রংপুর বিভাগের সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার ধরা হচ্ছে। কিন্তু এখানে নেই কোনো ডাক্তার-নার্স। করোনা পরীক্ষার কোনো যন্ত্রপাতি, কিট বা স্ক্যানার মেশিনও নেই। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা একটি করোনা ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি বেড প্রস্তুত রয়েছে। নগরের একটু দূরে হারাগাছে ৩১ শয্যা হাসপাতালেও রয়েছে তিন বেডের আইসোলেশন সেন্টার। তবে রংপুরে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী এলে তাঁকে শনাক্ত করতে ঢাকার আইইডিসিআরের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বলেন, রংপুর শিশু হাসপাতাল ছাড়াও জেলার আটটি উপজেলায় পাঁচ বেডের একটি করে আলাদা ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর দায়িত্বে রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক ও পাঁচজন নার্স। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। বিদেশফেরতদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে হারাগাছের ৩১ শয্যা হাসপাতাল, রংপুর যুব উন্নয়নের হোস্টেল ভবন এবং পুরো শিশু হাসপাতালও ব্যবহার করা হবে।
আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) আলতাব হোসেন জানান, জলকামান দিয়ে নগরের রাস্তাঘাট, মার্কেট প্লেস, জনসমাগম এলাকাগুলোতে স্প্রে করা হচ্ছে। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিটি ওয়ার্ডে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, কুইক রেসপন্স টিম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রাথমিক সহযোগিতা দেবে। এ জন্য টিমকে একটি অ্যাম্বুল্যান্সসহ দুটি গাড়ি ও প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট দেয়া হয়েছে।