টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি-৪) শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন করতে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিদর্শন ও তদারকির অভাব প্রকট। দেশের ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের দায়িত্বে আছেন মাত্র ২৩ কর্মকর্তা। তার ওপর গত দুই মাস ধরে সব ধরনের পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ আছে। ফলে পরিদর্শনের জন্য বার্ষিক যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ দেশের সব ধরনের মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা নিয়মিত পরিদর্শন করে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ শিক্ষা প্রশাসন গঠনে সহায়তা করা। এ ছাড়া অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরে সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করা।
জানা যায়, ডিআইএতে প্রথম শ্রেণির পদ রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে শূন্য আছে ১২টি। ফলে পরিদর্শনের জন্য আছেন মাত্র ২৩ জন কর্মকর্তা। কিন্তু সেই পরিদর্শনও অজানা কারণে বন্ধ আছে দুই মাস ধরে। দেশে ৩৬ হাজার ৭০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ হাজার। বর্তমান জনবল দিয়ে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও একটি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বার পরিদর্শন ১০ বছরেও শুরু করা সম্ভব নয়।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। এ কারণে পরিদর্শন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা চলছে। তাই আমাদের পরিদর্শন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা অটোমেশন সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছি। আগামী মাস থেকে এর পাইলটিং শুরু হবে। সেটা চালু হলে কাজের গতি আরও বাড়বে।’
ডিআইএর সাবেক এক পরিচালক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার কারণে পরিদর্শন করা যাবে না—এ ধারণা ঠিক নয়। এখন কলেজে কোনো পরীক্ষা নেই। এ ছাড়া দেশের মাত্র সাড়ে তিন হাজার প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। তাই যেখানে কেন্দ্র নেই এবং কলেজ পরিদর্শন কার্যক্রমে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে তিন হাজার ১০০ প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ডিআইএ। সে হিসাবে প্রতি মাসে ২৬০টি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু গত দুই মাসে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় শূন্য। ফলে বছরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ডিআইএ একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তার প্রয়োজন। এখানে নতুন কোনো কর্মকর্তা পদায়ন পেলে তাঁর কাজ বুঝতেই এক-দেড় বছর চলে যায়। বর্তমান পরিচালকও গত ডিসেম্বরের শেষে যোগ দিয়েছেন। তিনি এখনো তেমনভাবে কাজ বুঝে উঠতে পারছেন না। এমনকি এই অধিদপ্তরের একটি চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়াও অলিখিতভাবে তিনি স্থগিত করে রেখেছেন। এখন যে তিনজন উপপরিচালক আছেন তাঁরাও দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
তবে ডিআইএতে নতুন নতুন বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম ‘পিয়ার ইন্সপেকশন’ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ৩৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য জানা যাবে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম সহজীকরণসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এটির বাস্তবায়ন হলে পরিদর্শনজট কমবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। আর মার্চ থেকে অটোমেশন সফটওয়্যারের পাইলটিং শুরু হবে। এটি চালু হলে কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়বে।