ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ৮ বছর ধরে কলেজে পাঠদান করেও এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না অনেক শিক্ষক। বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের বহু কলেজ থেকে আর্থিক সুবিধা না পেয়ে মাস শেষে একপ্রকার শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরছেন শিক্ষকরা। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
কোর্স খোলার শর্ত হিসাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নীতিমালায় বলেছে, স্নাতক (পাস) কোর্স চালুর জন্য বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যান্য শর্তের পাশাপাশি নিয়ম মেনে তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দিলেই ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালুর অনুমতি দেয় এবং নবায়নের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম কঠোরভাবে মানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ডিগ্রি (পাস) স্তরে বিষয়ভিত্তিক দুই জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণায়ের জারি করা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিগ্রি (পাস) কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়াও প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (তথ্য প্রযুক্তি) দুই জন, প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (ঐচ্ছিক বিষয় চালু থাকলে) দুই জন হবে। এসব শিক্ষকই এমপিওভুক্তি পাবেন। এর বাইরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিলে এর দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে না। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকেই ঐ শিক্ষকদের বেতন দিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় বৈপরীত্য থাকায় বিপাকে শিক্ষকরা। কলেজে ডিগ্রি (পাস) কোর্স অনুমতি নিতে গিয়ে তিন জন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি ডিগ্রি কলেজগুলো। আর এতেই বিপত্তি ঘটে। দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও তৃতীয় জন এমপিওভুক্ত হতে পারছে না। তবে এ নিয়ে আদালতের রায়ের আলোকে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত পেয়ে থাকলেও এরপরের নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি (পাস) কলেজের এ জনবল কাঠামোকে সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নোমান উর রশীদ বলেন, শিক্ষার মান রক্ষার জন্য ডিগ্রিতে প্রতি বিষয়ে তিন জন শিক্ষক প্রয়োজন। সে হিসাব বিবেচনায় এনে ডিগ্রি খোলার শর্ত হিসাবে বিষয়ভিত্তিক তিন জন শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম—শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে যে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা করেছে সেখানে তিন জন শিক্ষকের কথা উল্লেখ করবে; কিন্তু তা করা হয়নি।
জাহিদ নামে এক শিক্ষক বলেন, ডিগ্রির বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় পদের শিক্ষকদের নিয়োগ বিধিমোতাবেক হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তি থেকে বঞ্চিত থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছি। তৃতীয় শিক্ষকরা সমান দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও আমরা বৈষম্যের শিকার। তবে ডিগ্রি কলেজে কতজন তৃতীয় শিক্ষক রয়েছেন তার সংখ্যা সংগ্রহ করেছে মন্ত্রণালয়। মাউশির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮৪১ জন বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় শিক্ষক রয়েছেন। এদের এমপিওভুক্ত করতে সরকারের ২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে।