ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জাতিসংঘের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সদ্য প্রণীত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, এই আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে এবং বিনা বিচারে গ্রেফতার, আটকাদেশ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় অন্যান্য অযাচিত বাধানিষেধ এড়াতে আইনটিতে যাতে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থাকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে বলেন, বিদ্যমান অবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ আইনের আধেয় ও পরিধি, মতামত প্রকাশের অধিকারচর্চা, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়াকে ভীষণভাবে ব্যাহত করবে— এ মর্মে ব্যাপক উদ্বেগ সত্ত্বেও সোমবার ( ৮ অক্টোবর) এটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক, ব্লগার, ভাষ্যকার ও ইতিহাসবিদদের কাজে গুরুতর প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে এ আইন অন্যদের, এমনকি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর আইনত স্বীকৃত অধিকার দণ্ডিত করবে।

রাভিনা শামদাসানির দেয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অস্পষ্ট ও ঢালাও কিছু ধারা রয়েছে। যেখানে অনলাইনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত অথবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার মতো বক্তব্যের জন্য সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড হতে পারে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, জাতীয় সংগীত অথবা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো রকম বক্তব্য বা প্রচারণার জন্য প্রথমবার অপরাধের ক্ষেত্রে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। ঔপনিবেশিক আমলের দাফতরিক গোপনীয়তা আইনের সঙ্গে ডিজিটাল অপরাধের সংযোজনের ধারাগুলোয় ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা একাধিকবার অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, এ আইনে পুলিশকে পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি ও গ্রেফতারের ঢালাও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আইনে উল্লেখিত অনেক অপরাধ অজামিনযোগ্য। বাংলাদেশে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, তাতে এ বিষয়টি বিশেষ উদ্বেগের কারণ। এ আইনে সরকারকেও ডিজিটাল তথ্যপ্রবাহে নিয়ন্ত্রণ ও বাধা আরোপের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

 বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নাগরিক ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তির ৯ ধারায় যথেচ্ছা গ্রেফতার থেকে সুরক্ষা, ১৭ ধারায় ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও যোগাযোগে হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা এবং ১৯ ধারায় মত ও প্রকাশের স্বাধীনতার যে অঙ্গীকার বাংলাদেশ করেছে, বিদ্যমান অবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পার্লামেন্টে প্রাথমিক অনুমোদনের একদিন পর গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ চলাকালে বাংলাদেশ সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সুপারিশগুলো মেনে নিয়ে আইনটি আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু সমস্যাপূর্ণ ধারাগুলো পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আইনটি পাস হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005695104598999