ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ফল খারাপ কেন?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন জেলা ফরিদপুর। এবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় (জেএসসি) ফরিদপুর জেলা থেকে ৩৩ হাজার ৪০৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পাশ করে ৬৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থ্যাত্ প্রায় ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। বরিশাল বোর্ডের বরগুনার চেয়ে ৩২ শতাংশ কম পাশ করেছে এই জেলায়। শুধু ফরিদপুর জেলা নয়, ঢাকা বোর্ডের ১৪টি জেলার মধ্যে ১২ জেলার ফল অন্যান্য যেকোনো জেলার চেয়ে খারাপ। শনিবার (৪ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বরিশাল বোর্ডের গড় পাশ ৯৭ শতাংশের বেশি। অথচ ঢাকা মহানগরীর পাশের হার ৯১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার সব সুবিধা থাকায় ঢাকা মহানগরীর পাশের হার সব সময় বেশি থাকে। অথচ জেএসসির এই ফল কেন, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারাও।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোয় ফল তুলনামূলক অন্যান্য জেলার চেয়ে ভালো হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী ভালো করেনি। এ বিষয়টি খতিয়া দেখা হবে। তবে অভিভাবকরা বলছেন, ঢাকা ও আশপাশের জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক জটিলতা বেশি। শিক্ষা বিভাগের কোনো মনিটরিং নেই। গভর্নিং বডি ও প্রতিষ্ঠান প্রধান ব্যস্ত থাকে নানা অনিয়মে। এছাড়া গভর্নিং বডি নিয়ে দ্বন্দ্বতো আছেই। এসব কারণে ঢাকার ফল খারাপ হয়েছে।

আজিজুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক জানান, মনিটরিং দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ছে এই জেলাগুলো। ঢাকা অদূরে হওয়ায় কর্মকর্তারা ঘনঘন ঢাকায় যান বিভিন্ন তদ্বিরে। স্কুলের কোনো মনিটরিং হয় না। আর এমপিওভুক্তির কাজ উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে হওয়ার কারণে কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকেন এসব কাজে। স্কুলে ঠিকমত পাঠদান হয় কি না, বা শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে কি না, সে বিষয়ে কোনো তদারকি নেই।

ঢাকার এত পাশের হার কম হবার কারণ হিসাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। তিনি বলেন, ঢাকার শিক্ষকদের খাতা দেখার মান আর বরিশাল বিভাগের শিক্ষকদের খাতা দেখার মান এক নয়। এ কারণে ফলের তারতম্য হয়েছে। এছাড়া প্রশ্নের মানের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়েছে।

ঢাকা বোর্ডের অধীনে ১৪টি জেলা রয়েছে। এই ১৪ জেলায় গড় পাশ ৮২ শতাংশ। ঢাকা মহানগরীতে পাশের হার প্রায় ৯১ শতাংশ।

একইভাবে মাদারীপুরে পাশের হার ৭২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মুন্সীগঞ্জে প্রায় ৭৮ শতাংশ, শরিয়তপুরে ৭২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৭৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, মানিকগঞ্জে ৭৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, কিশোরগঞ্জে ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ, রাজবাড়ীতে ৭৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

অন্যদিকে বরিশালের বরগুনায় পাশের হার ৯৮ শতাংশের বেশি। এর হার ভোলায় প্রায় ৯৮ শতাংশ, বরিশালে ৯৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ৯৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, পিরোজপুরে প্রায় ৯৬ শতাংশ এবং ঝালকাঠিতে ৯৫ শতাংশ।

ফরিদপুরের ফল খারাপ হয়েছে তা জানেন না জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণু ঘোষাল। তিনি বলেন, এ জেলায় পাশের হার কত সে তথ্য এখনো পাইনি। তবে কেন খারাপ হলো এ বিষয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানব। ‘আমার গ্রাম আমার শহর, ফরিদপুর হবে শিক্ষার নগর’—এমন স্লোগান নিয়ে ফরিদপুরকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন থাকলেও এই ফল কতটা স্বপ্ন বয়ে আনবে তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন স্থানীয়রা।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, শিক্ষার মান বৃদ্ধিসহ শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নে মনিটরিং-ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। কিন্তু ঢাকার আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে মনিটরিং হয় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028488636016846