ঢাকা দক্ষিণের ‘মাদক সম্রাট’ খালেদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ‘মাদক সম্রাট’ হলেন খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া। দক্ষিণের প্রতিটি থানা এলাকায় তার নিয়োগ দেয়া আছে একজন করে সেক্টর প্রধান। তারা ঐসব থানা এলাকায় মাদকের সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন। আর খালেদের মাদক ব্যবসার ক্যাশিয়ার হলেন সাধু। প্রতি রাতে সাধু মাদকের ১০-১৫ কোটি টাকা নিয়ে যেতেন খালেদের বাসায়। সেখানে ভাগ হয়ে যেত। পরদিন সকালের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে টাকার ভাগ পৌঁছে যেত। মাদকের এই টাকা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা পেতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া ওরফে ল্যাংড়া খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মাদক ও টাকার ভাগের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন। ক্যাসিনো বাণিজ্যের পাশাপাশি মাদকের ব্যবসায় খালেদের সর্বাধিক আয়। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, খালেদের মাদকের ক্যাশিয়ারের নাম সাধু ওরফে সাধন। শাহজাহানপুর, খিলগাঁও ও মালিবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় চাঁদা আদায় এবং মাদকের একক আধিপত্য সাধুর। খিলগাঁওয়ে রবি সংঘ ও জাগরণী সংসদে মদ, জুয়া, ইয়াবাসহ মাদকের হাট বসে। সাধুকে যুবলীগের নেতা বানান খালেদ। তবে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটেরও আশীর্বাদ ছিল সাধুর ওপর। দক্ষিণে মাদকের সব টাকা যেত সাধুর কাছে। নেতাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক শ্রেণির কর্মকর্তাও মাদকের টাকার ভাগ নিয়মিত পেতেন। এ কারণে কঠোর অভিযানের মধ্যেও রাজধানীতে ইয়াবা আসা বন্ধ হয়নি। সাধু এক সময় ঐ শাহজাহানপুর এলাকার টোকাই ছিল। এলাকাবাসীর সবাই তাকে চেনে টোকাই সাধু হিসেবে। যুবলীগ নেতা খালেদের সংস্পর্শে এসে জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। তিনি এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক।

র‌্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ও নিহত হচ্ছে প্রায় দিনই। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক। খালেদের মতো ইয়াবা সম্রাটের কারণে রাজধানীতে ব্যাপক হারে আসছে ইয়াবার চালান। এর বেশির ভাগ চালান আসতো খালেদের কাছে। খালেদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও দলীয় এক শ্রেণির ক্ষমতাধর নেতার নিয়মিত আর্থিক সম্পর্ক থাকার কারণে ইয়াবার চালান বিনা বাধায় তার কাছে চলে এসেছে। খালেদ জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন। উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছেন আরেক যুবলীগ নেতা, যার নামের আদ্যাক্ষর ‘নি’। তাকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, শুধু ঢাকাতেই ৩০০টি বড়ো এবং ৭০০টি ছোটো মাদকের স্পট রয়েছে। এসব বন্ধে যাদের কাজ করার কথা, সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে মাদক কিনতে ও খেতে দেখা গেছে। তারা নিয়মিত পাচ্ছেন মাসোহারা। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পৃষ্ঠপোষকতাও পায় মাদক ব্যবসায়ীরা।

যেসব পথ দিয়ে ঢাকায় ঢুকছে মাদক

কক্সবাজার, টেকনাফ ও পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তপথ দিয়ে মাদক প্রবেশ করে। সেখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে দিয়ে বাস, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে সরাসরি যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে। নৌপথে আসছে কক্সবাজার থেকে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা ও সদরঘাট এলাকা দিয়ে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তপথ দিয়ে মাদকের চালান কাভার্ড ভ্যান, নাইটকোচ, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহনের মাধ্যমে গাবতলী ও টঙ্গী দিয়ে ঢুকছে। রাজধানী সংলগ্ন টঙ্গী হলো মাদকের বৃহত্ মার্কেট। উত্তরা ও গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় দামি গাড়িতে করে বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য। মাঝে মাঝে এসব বন্ধে অভিযান চলে, তবে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মাদক আইনে মামলা হয় প্রায় ৩৮ হাজার। সেখানে গত বছর মামলা সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭০ হাজারে। অর্থাৎ দিনদিনই বাড়ছে মরণনেশার ব্যবহার এবং এর সঙ্গে জড়িতদের সংখ্যা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053489208221436