বিভ্রান্তিকর তথ্যে-উপাত্তে ঠাসা ঢাকা স্টেট কলেজের অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলামের শিক্ষা সনদ। আর এই সনদ দিয়েই তিনি দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। এমনকি বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে চাকরি করছেন। নতুন ইনডেক্সে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হওয়ারও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
দিলাওয়ারার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলোর তথ্যের অসঙ্গতি তদন্ত করে দেখা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল দাবি করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। স্থানীয় সাংসদ সাদেক খানের কাছে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। এছাড়া অভিভাবক প্রতিনিধি পদের জন্য নিয়মিত নির্বাচন না দিয়ে পছন্দ মতো পরিচালনা পর্ষদ গঠনেরও অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
এছাড়া পরিচালনা কমিটিতে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নে শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখার একজন নারী সহকারী পরিচালকের সাথে যোগসাজশে কাজ করা ও স্থানীয় সাংসদ সাদেক খানের ডিও লেটারের বিরোধীতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কলেজটির বর্তমান কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
মিজানুর রহমান তালুকদারের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়, চাকরির জন্য জমা দেয়া শিক্ষা সনদগুলোতে রয়েছে বিভ্রান্তিকর তথ্য। পাকিস্তানের সারাগোদা শিক্ষাবোর্ড থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে এইএচএসি পাস দেখানো হয়। কিন্তু কোন কলেজ থেকে পাস করেছেন তার উল্লেখ নেই। দিলাওয়ারার জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৫৬ এবং এসএসসি পাস ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। সে হিসেবে ১৩ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন; যা প্রশ্নবিদ্ধ।
অভিযোগে বলা হয়, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ইডেন কলেজ থেকে নিয়মিত ছাত্রী হিসেবে বিএ পাস করেন। যা সম্ভব নয়। কারণ, উচ্চ মাধ্যমিকের পর ৭-৮ বছর শিক্ষাবিরতি থাকলে নিয়মিত ছাত্রী হওয়ার কথা নয়। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের তথ্য গোপন করে তিনি ইডেন কলেজে ভর্তি হয়েছেন বলে সন্দেহ অভিযোগকারীর।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা স্টেট কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রভাব খাটিয়ে তিনি ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অধ্যক্ষকে সরিয়ে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও পরে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে অধ্যক্ষ পদ ফিরে পাওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪২তম সভায় দিলাওয়ারাকে চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে কিছুই করণীয় নেই মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুনে তিনি জোরপূর্বক অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত এবং অবৈধভাবে নতুন ইনডেক্স নিয়ে এমপিওভুক্ত হন।
অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে অধ্যক্ষ দিলাওয়ারা প্রতিবেদককে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, টেলিফোনে কোনো মন্তব্য করবো না। অফিসে আসেন সামনাসামনি কথা বলবো।