ঢাবিতে ভর্তি হতে পারছে না দুর্গম চরের হতদরিদ্র ইমরান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম দ্বীপচর গাবগাছির ইমরান হাসানের পালিত স্বপ্ন হাতের নাগালে এসেছে। কিন্তু অধরাই রয়ে গেছে। তার কপালে এমনই হবে? এ প্রশ্নটি শুধু ইমরান বা তার পরিবারের নয়, প্রতিবেশী গ্রামবাসীদেরও। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে জমি-বসতভিটা হারানো বাবা কোমর আলী মন্ডল ও স্নেহময়ী মা জাহানারা বেগমের দুশ্চিন্তা আয় যায় না। 

মা জাহানারা চোখ মুছতে মুছতে জানান, তার সাত ছেলে-মেয়ের মধ্যে পঞ্চম এই ছেলেটি অনেক মেধাবী। বুকভরা আশা ছিল, এই ছেলেটি পরিবারের সব দুঃখ মুছে দেবে। ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে সে। সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বগুড়ার কলেজজীবন পর্যন্ত কি অবর্ণনীয় কষ্ট করে ছেলেটা পড়ালেখা করেছে। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে বসে আছে গাবগাছিতে। অথচ ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে ভর্তি। ওর মুখের দিকে তাকানো যায় না।

গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে গাবগাছি যেতে প্রায় তিন ঘণ্টার নদীপথ। সেখানে মেধাবী এই ছেলেটিকে সবাই চেনেন। কাজেই তাকে খুঁজে পেতে সমস্যা হয় না।

ইমরানের সাথে কথা বলে জানা গেল, দিশেহারা সে, কষ্টে হৃদয় ভেঙে গেছে। ভালো খাবার, পোশাক এসব নিয়ে কখনও ভাবেনি সে। কখনও উপবৃত্তি, কখনো টিউশনি আর মানুষের ফাই-ফরমাশ খেটে দিয়ে এতদূর এসে হঠাৎ থমকে গেছে তার জীবন। ইমরান হাসে, সেই হাসিটাও কান্নার মতই। বলল, ফুলছড়ি পাইলট স্কুলে পড়ার সময় প্রতিদিন নৌকার মাঝির দয়ায় নদ পেরিয়ে স্কুলে গেছি। জেএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ আর এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বৃত্তি না পেলে হয়তো তখনই লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যেত। বিজ্ঞানে পড়ার অনেক খরচ। তাই এইচ এসসিতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয় সে। মেসে থাকা খাওয়ার খরচ জুটেছে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে। বিকেল থেকে রাত দশটা এগারোটা অবধি প্রাইভেট পড়িয়ে অবসন্ন শরীর আর চলতে চাইতো না। তবু লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে জাগিয়ে রাখত। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত পড়া। এভাবেই এ বছর আবারও জিপিএ-৫ পায় সে। 

স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। বিষয় যা আসবে তাতেই ভর্তি হবে সে। 'বি' ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ইমরান সুযোগ পেয়েছে উর্দু বিভাগে। ধারদেনা করে পরীক্ষা দিয়েই বাড়ি চলে আসে সে। এখন আবার ঢাকা যাওয়ার পালা। ভর্তি, যাতায়াতের খরচ সব মিলিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু অসহায় পরিবারটির এই টাকা জোগানোর ক্ষমতা নেই।

ইমরান বলে, কি করব বুঝতে পারছি না। কোনদিক থেকে টাকা জোগাড়ের আশা নেই। হাত পাততেও আর ভালো লাগে না! বন্ধুদের বলেছি, আমার হয়ত এখানেই থেমে যেতে হবে।

ছোট বোন গাবগাছি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রী কল্পনা আকতার বলল, ভাইজান বাড়িতে এসে সারাদিন বালু চর আর নদীর পাড় ধরে হেঁটে বেড়ায়। খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ। আপনারা তো কত কি পত্রিকায় লেখেন। আমার ভাইজানের কথা একটু লেখেন না!

প্রতিবেশী আবদুল্লাহ মিয়া বললেন, এই ছেলেটাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা। ও যদি মানুষ হয়,তাহলে আমাদের মত অভাবী মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারত। সব পরিবারে এত মেধাবী তো আর হয় না। 

ফেরার সময় নৌঘাটে ইমরান যখন হাত নাড়ছিল, তখন দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছিল, তার ঝাঁপসা চোখের কোণ বেয়ে পড়ছে অশ্রু। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026171207427979