ঢাবির হলে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে ৪ ছাত্রকে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার ছাত্রকে স্টাম্প ও রড দিয়ে পেটানোর পর হল প্রশাসনের মাধ্যমে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছেন, ওই চার ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় দিয়েছে হল প্রশাসন। বুধবার (২২ জানুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের অতিথিকক্ষে ‘গেস্টরুম কর্মসূচি’ শেষে রাত দুইটা পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদের পেটান ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। পরে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে তাঁদের রাজধানীর শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ওই চার ছাত্র হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরী, একই বর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন ১২ ছাত্রসংগঠনের জোট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য।

হল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১১টার দিকে শিবির সন্দেহে মুকিমকে অতিথিকক্ষে নিয়ে আসেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা। পরে সেখানে আসেন হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন নেতা। তাঁরা মুকিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। মুকিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় পরে আফসারকেও অতিথিকক্ষে ডেকে পাঠান তাঁরা। কিছুক্ষণ পর অতিথিকক্ষ থেকে মুকিম ও আফসারকে হলের বর্ধিত ভবনে নিয়ে যান তাঁরা। মুকিম ও আফসারের সঙ্গে সানওয়ার ও মিনহাজের ফেসবুকে যোগাযোগ থাকায় তাঁদেরও ডেকে পাঠান ছাত্রলীগের নেতারা।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন আলম চার ছাত্রকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে হাতুড়ি দিয়েও চার ছাত্রকে পেটান তাঁরা। লাঠি, রড ও হাতুড়ি নিয়ে মারধরে অংশ নেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজাসহ আরও কয়েকজন। রাত দুইটা পর্যন্ত এই নির্যাতন চলে। পরে রাত দুইটার দিকে হলের একজন আবাসিক শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে চার ছাত্রকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ গতকাল রাতে চার ছাত্রের মারধরে গুরুতর আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।

হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা সাংবাদিকদের বলেন, ওই চার ছাত্রের শিবিরসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছিলেন বলেই তাঁদের থানায় দেওয়া হয়েছিল। প্রমাণগুলো তাঁরা পুলিশকে দিয়েছেন।

ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ওই চার ছাত্র কোনো শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে তাঁদের থানায় দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে  বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ওই চার ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিবিরসংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।’

ঘটনার বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেছেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে শিবিরসংশ্লিষ্টতা থাকায় চার ছাত্রকে থানায় দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের মারধর করা হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, কারও ওপর শারীরিক আঘাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031659603118896