নীলফামারী জেলার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তথ্য গোপন করে প্যাটার্ন অতিরিক্ত শতাধিক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে এ সব শিক্ষক এমপিও নীতিমালা বহির্ভূতভাবে প্যার্টানের অতিরিক্ত বিল উত্তোলন করছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণির অসাধু কর্তকর্তা-কর্মচারী তথ্য গোপন করে মাধ্যমিক স্তরে ননএমপিও শিক্ষকদের অবৈধভাবে বেতন-ভাতাদি প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন জেলার বিভিন্ন জুনিয়র স্তরের এমপিওভুক্ত ও মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত ননএমপিও শতাধিক শিক্ষক।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলার ছয় উপজেলায় এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৯টি। প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালা মেনে এমপিওভুক্ত হয়। জনবল কাঠামো অনুযায়ী বালক প্রতিষ্ঠান হলে ৭ শিক্ষক ও ২ কর্মচারী এবং বালিকা বিদ্যালয়ে ৭ শিক্ষক ও ৩ কর্মচারী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এমপিওভুক্তি লাভ করে। এছাড়াও হিন্দু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১ শিক্ষক যোগ হতে পারে।
জুনিয়র স্তরে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পেলে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এমপিও জনবল কাঠামো নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিকে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি মাধ্যমিক স্তর আর্থিক কোড অনুমোদিত না হলে শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না। তারপরেও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কিছু কিছু জুনিয়র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন। একইভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক অবৈধ পথ অবলম্বন না করায় এখন পর্যন্ত বিনাশ্রম পাঠদান দিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
তথ্য গোপন করে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে জলঢাকা উপজেলার দক্ষিণ পাঠান পাড়া এইচ.বি.এম নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ভবনচুর মরাতিস্তা এ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাবরোল তহশিলদার পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঘুঘুমারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বালাগ্রাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেরুবন্দ হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রশিদপুর নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বালাপাড়া গাবরোল নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মালেকা বেগম নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও পশ্চিম কাঠালি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।
ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ কাকড়া এস সৈয়দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পূর্ব ছাতনাই এ.ডি.এ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দোহল পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, হংসরাজ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, বোড়াগাড়ি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও বড়রাউতা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর দুরাকুটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিসামত বদি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেড়ভেড়ী মাঝাপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গারাগ্রাম আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেগম খালেদা জিয়া মডেল নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ছীট রাজিব মডেল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গণেশ আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
নীলফামারী সদরের ছত্রশাল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শালহাটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যাদুরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, গোড়গ্রাম নিজ পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ফুলতলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উত্তর পাঠকামুরী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ সব বিদ্যালয়ে ৬ শিক্ষকের পরিবর্তে এমপিও শিটে ৮থেকে ১৪ জন পর্যন্ত প্যাটার্ন অতিরিক্ত প্রায় শতাধিক শিক্ষক বিল উত্তোলন করছেন।
জুনিয়র এমপিওভুক্ত ইটাখোলা কালিতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্তরে সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দ হতে এমপিওভুক্ত না হয়ে এসব শিক্ষক মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এমনই একজন হলেন- সহকারী শিক্ষক শম্ভু চরণ গাঙ্গুলী। তিনি বলেন, জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালা মেনে এমপিওভুক্ত হওয়ার আশায় আছি। মরে গেলেও অন্য কোনো পথে এমপিওভুক্ত হতে চাই না।
জলঢাকা উপজেলার রশিদপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহিদুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, সরকারি নিয়োগ বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে এমপিও সুবিধা পেয়েছেন তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
ডোমার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাকেরিনা বেগম নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্যার্টান অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম শুরুর আগে জুনিয়র বিদ্যালয়ে প্যার্টান অতিরিক্ত শিক্ষক এমপিও হয়েছেন। এখন আর এ সুযোগ নেই।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণি শাখা কিংবা অন্য কোনোভাবে জনবল কাঠামোর বাইরে অতিরিক্ত শিক্ষক এমপিওভুক্তির কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে এমপিওভুক্তি কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে এ সব অবৈধ এমপিওভুক্তির সুযোগ এখন বন্ধ হয়েছে।