অবশেষে বহুল আলোচিত ঢাকাস্থ ‘ইন্টারন্যাশনাল তার্কিশ হোপ স্কুল’ পরিচালনার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে তুরস্কের বিতর্কিত নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীদের কব্জা থেকে স্কুলটিকে মুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তাদের স্কুলের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়াটি কী হবে? তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যেফ এরদোগানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের জন্য ‘দায়ী’ যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের অনুসারীরা তার্কিশ হোপ স্কুলসহ ঢাকায় বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে আঙ্কারা। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে গত জুলাইতে ঢাকাস্থ তার্কিশ দূতাবাস বিষয়টি নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমপ্রতি ঢাকা সফরকারী তার্কিশ প্রধানমন্ত্রী, ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরাও বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করেন।
এ নিয়ে ঢাকা-আঙ্কারা ফরেন অফিস কনসালটেশনেও বিস্তৃত আলোচনা হয়। এরদোগান সরকারের প্রতিনিধিদের একটাই চাওয়া- কোনো গুলেন সমর্থককে থাকতে না দেয় বাংলাদেশ সরকার। তুরস্কের সেই উদ্বেগ এবং আকাঙক্ষাকে আমলে নিয়ে এবং দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে উদ্যোগী হয় সরকার। এ নিয়ে একাধিক বৈঠক এবং সিরিজ তদন্ত হয়।
সর্বশেষ গতকাল সেগুনবাগিচায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সভাপতিত্ব করেন। সেই আলোচনায় গুলেন সমর্থকদের ঢাকা থেকে বের করে দেয়া ছাড়াও তার্কিশ হোপ স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে দূতাবাসের আগ্রহের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। গুটিকয়েক গুলেন অনুসারীর জন্য তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জোরালো পরামর্শ আসে। অনেকে অবশ্য এ-ও জানতে চান, দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের জড়ানো কী ঠিক হবে? বেশিরভাগ কর্মকর্তা অভিযুক্ত গুলেন সমর্থকদের পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়ার পক্ষে মত দেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল বিকালে বলেন, সার্বিক বিবেচনায় অভিযুক্ত গুলেন সমর্থকদের বাংলাদেশে কী কী বিষয়-সম্পৃক্ততা রয়েছে তা আরো ভালোভাবে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে তার্কিশ হোপ স্কুলসহ তাদের যেসব বিনিয়োগ বা শেয়ার রয়েছে তা বিক্রি করে চলে যাওয়ার অনুরোধ করা হবে। আপসে সেটি না হলে তাদের জোর করে বের করে দেয়া হবে। ওই স্কুলে প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, তাদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্কুলটি বন্ধ না করে পরিচালনায় সরকারের সম্পৃক্ততা ও নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এটি আচমকা হবে না, পর্যায়ক্রমে এবং সরকারের সব বিভাগ ও সংস্থার সমন্বয়ে এটি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দূতাবাস পুরো স্কুলের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। তারা শেয়ার কিনে হলেও এটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। আমরা তা চাই না।