প্রাথমিকের বিনা মূল্যের পাঠ্য বই মুদ্রণতিন মাস খুইয়ে ১১১ কোটি টাকা বেশিতেই কাজ

শরীফুল আলম সুমন |

তিন মাস সময় নষ্ট করে ১১১ কোটি টাকা বেশি দিয়েই প্রাথমিকের বইয়ের কার্যাদেশ দিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। পুনঃ দরপত্রে কাজ পাওয়া মুদ্রাকরদের গত সোমবার থেকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) দেওয়া শুরু করেছে এনসিটিবি। এসব জটিলতার পাশাপাশি রয়েছে সংসদ নির্বাচন। ফলে যথাসময়ে বই পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনওএ দেওয়ার পর মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি করতে নিয়মানুযায়ী আরো ২৮ দিন সময় দিতে হবে। তারপর মুদ্রণকারী বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর ৮৪ দিন সময় পাবে। এরপর আরো এক মাস সময় পাবে জরিমানা দিয়ে বই পৌঁছানোর। সেই হিসেবে উপজেলা পর্যন্ত বই পৌঁছাতেই ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। অথচ নির্বাচনী বছরে অক্টোবরের মধ্যে বই উপজেলায় পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, ‘আমাদের ঈদের পর কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা ঈদে বাড়িতে গেলে ১০-১৫ দিন না থেকে আসতে চায় না। এখন তারা যদি দেরি করে তাহলে কাজ শেষ করা আরো পিছিয়ে যাবে। এ ছাড়া এনওএ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে সব কাজে আরো ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। সেটা হলে আমাদের পক্ষে কাজ করাটা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এটা সমাধান না হওয়া পর্যন্তও মুদ্রণকারীরা কাজ শুরু করবে না। ফলে সব মিলিয়ে জটিলতা কাটছে না।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বইয়ের প্রতি ফর্মা দুই টাকা ২৫ পয়সা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। কিন্তু মুদ্রণকারীরা দাম দেয় দুই টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ৯৩ পয়সা পর্যন্ত। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ায় পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়। পুনঃ দরপত্রেও একই দাম দেয় দরদাতারা। এখন প্রাক্কলিত দর থেকে ১১১ কোটি টাকা বেশি দিয়েই এনওএ দেওয়া হয় মুদ্রণকারীদের। কিন্তু মাঝখানে সময় নষ্ট হয় তিন মাস।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দরপত্রেই সংকট কাটানোর পথ খোলা ছিল এনসিটিবির হাতে। পিপিপির ৯৮ ধারার ২৫ উপধারা অনুযায়ী বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি দর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারত। এতে এই তিন মাস সময় নষ্ট হতো না। এই জন্য এনসিটিবির কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করে বলা হচ্ছে তাদের অদক্ষতার কারণেই যথাসময়ে বই পৌঁছা নিয়েও শঙ্কার সৃষ্টি হলো।

সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের ১১ কোটি বইয়ের ৯৮ লটের কাজের মধ্যে ভারতীয় দুটি কম্পানি পেয়েছে ১০টি লটের কাজ। কৃষ্ণা ট্রেডার্স ও স্বপ্না প্রিন্টার্স নামের ওই দুটি প্রতিষ্ঠান মোট এক কোটি চার লাখ ৫৩ হাজার বই ছাপার কাজ পেয়েছে।

মুদ্রণকারীরা জানান, আগের বছরগুলোতে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় প্রাথমিকের বই ছাপায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের বাধ্যবাধকতা ছিল। কিন্তু এবার সরকার তাদের নিজস্ব অর্থায়নে বই ছাপছে। এর পরও আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মুদ্রণকাজ বিশ্বমানের। স্থানীয় মুদ্রাকরদের অভিযোগ, মূলত বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর প্রথম দরপত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ না পাওয়ায়ই মূলত পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়।

মুদ্রণ সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, ‘প্রথম দরপত্রে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানও তালিকায় ছিল না। অথচ পুনঃ দরপত্রে তারা ঠিকই ১০টি লটে কাজ পেয়ে গেল। তাই এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমাদের নিজেদেরই যেহেতু সক্ষমতা রয়েছে তাহলে কেন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হচ্ছে?’

এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠান আগেও কাজ পেয়েছে। তবে তখন সমুদ্রপথে বই আসাতে দেরি হয়েছিল। এবার দুটি প্রতিষ্ঠানই কলকাতার হওয়ায় সড়কপথে বই আসবে। তাই দেরি হওয়ার আশঙ্কা কম। আর কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হলেও আগের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। তাই এক প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ পড়বে না। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে ৯০ ভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।’

 

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034360885620117