তুরস্ক চাইলেও ‘টার্কিশ হোপ স্কুল’ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে বাধা

বিভাষ বাড়ৈ |

তুরস্ক সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশে পরিচালিত ‘ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুল’ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় সরকার। এরদোগান সরকার তার প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তুর্কী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের আদর্শে প্রভাবিত সংগঠনের তৎপরতা চলছে-এমন অভিযোগ এনে টার্কিশ হোপ স্কুল পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধের পর উদ্যোগী হয়েছে সরকার। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে রীতিমতো জটিলতায় পড়েছে। একদিকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, অন্যদিকে এর মালিকানা বাংলাদেশ না হওয়ায় কোনভাবেই এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া সম্ভব নয় বলে বলছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটা সরকারী করারও কোন আইন নেই বলে জানান তারা।

এ অবস্থায় সরকার চাইলেও একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব আদৌ নেয়া সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকায় অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনের জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দিলেও কর্মকর্তারা বলছেন, পরিদর্শন করে সার্বিক রিপোর্ট শীঘ্রই দেয়া হবে। তবে এ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠান সরকারী বা পরিচালনার দায়িত্ব কোন আইন অনুসারেই সরকার নিতে পারেনা। দেশে পরিচালিত কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সরকারের কোন নীতিমালা মেনেই চলেনা। তাছাড়া এটি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় বিকল্প কোন উপায়ে সরকার এটি পরিচালনা করতে পারে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা মূল ক্যাম্পাস ছাড়াও গুলশানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল টার্কিশ হোপ স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব সরকার নিতে চায়। গত বছর ১৫ জুলাই তুরস্কে সংঘটিত ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান সরকারের অনুরোধেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার চিন্তা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেবরিস অজতুর্ক এ জন্য সরকারের কাছে লিখিত চিঠিও দিয়েছেন।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যের সংখ্যা, কারা আছেন সেখানে, কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে, অবকাঠামো, অনুমতির শর্তাবলী, মালিকানার ধরন, অনুমোদিত/ অননুমোদিত শাখা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, কারিকুলামসহ আরও বেশ কিছু তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরিদর্শন করে এ সব তথ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সব তথ্য চাওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠকেও হয়। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নথি পাঠানো হয়। এতে এ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা সরকার কিভাবে নিতে পারে তা জানতে চাওয়া হয়। তার আগেই তুরস্কের রাষ্ট্রদূত এ স্কুলের দায়িত্ব সরকারকে নিতে অনুরোধ করেন বলে জানা গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা তুরস্কের অনুরোধের বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, বাংলাদেশে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেবরিস অজতুর্ক ইতোমধ্যেই সরকারকে জানিয়েছেন, তুরস্ক সরকার ঘোষিত ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন ফেতোর কার্যক্রম বন্ধ ও এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে দেশটি। তুরস্ক মনে করে, বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ফেতোর কার্যক্রম ও অনুসারী রয়েছে। ঢাকার টার্কিশ হোপ স্কুলের সঙ্গে জড়িত কতিপয় তুর্কী নাগরিক ফেতোর অনুসারী। তাই এ স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারকে নিতে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।

এদিকে টার্কিশ হোপ স্কুলে জঙ্গী সম্পৃক্ততা রয়েছে কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনেই অভিযোগ তুলেছিলেন ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ওজতুর্ক। এ বিষয়ে সরকারকে দূতাবাস থেকে অবহিতও করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তুরস্কের ফেতুল্লাহ গুলেনের সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিছু বাংলাদেশী কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি এই সংগঠনের তৎপরতা রুখে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সূত্র নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তুর্কী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের আদর্শে প্রভাবিত সংগঠন এফইটিও বা ফেতোর সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু লোকও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যুক্ত রয়েছে বলে সরকারকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশে টার্কিশ হোপ স্কুলের বেশ কয়েকজন তুরস্কের নাগরিক এসব কর্মকা-ে জড়িত। এ ছাড়াও বাংলাদেশ-তুরস্ক চেম্বার অব কমার্সের প্রথম প্রশাসন জঙ্গী কর্মকা-ে যুক্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ-তুরস্ক চেম্বার অব কমার্স তুরস্ক সরকারের কোন অনুমোদিত সংগঠন নয়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে যে কোন ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত তুরস্ক।

রাষ্ট্রদূত বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তুরস্ক শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতিকে সমর্থন করে। তবে আমরা টার্কিশ হোপ স্কুল বন্ধের পক্ষে নই। কারণ এখানে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। কিন্তু স্কুলের কর্মকর্তা পর্যায়ের অনেকেই নিষিদ্ধ এফইটিও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, গুলেনের আদর্শে প্রভাবিত সন্ত্রাসীরা তুরস্ক, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫০ দেশে সক্রিয়। তারা তুরস্কের নাম নিয়ে এ দেশে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তুলেছে, যার কোন অনুমোদন তুরস্ক দেয়নি। তাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

কারণ তুরস্কে যা ঘটেছে তা বাংলাদেশে কাম্য নয়।

তবে তুরস্কের বর্তমান সরকার উৎখাতে ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়াও তার মতাদর্শের সংগঠনকে জঙ্গী সংগঠন বলে নিষিদ্ধ করা হলেও এ নিয়ে ভিন্নমতও আছে। ফেতুল্লাহ গুলেনসহ ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর বিচারের মুখোমুখি হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের অবস্থানকে জঙ্গী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলেই দাবি করেছেন। এমনকি ফেতুল্লাহ গুলেন সব সময় ওই অভ্যুত্থানের পেছনে তার ভূমিকা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের দেশের অবস্থান যেটাই হোক। বর্তমান তুরস্ক সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পন্ন বন্ধুত্বপূর্ণ। তাই তাদের অনুরোধ কিভাবে রক্ষা করা যায় সেটাই ভাবা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বলছিলেন, তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের চিঠির পরই সরকার এ স্কুলের পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার চিন্তাভাবনা করে। তবে এটা করা খুব সহজ হবেনা বলেই মত দেন এ কর্মকর্তা। কারণ হিসেবে তিনি একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সরকার চালাতে পারেনা বলেই উল্লেখ করে। বলেন, এর কোন কার্যক্রমই বাংলাদেশের নিয়ম এমনকি শিক্ষাক্রমও সরকারী নয়। তাই আগে শিক্ষা বোর্ডের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এদিকে এ কর্মকর্তার কথার মিল পাওয়া গেল শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের কথাতেও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর ইতোধ্যেই পরিদর্শন উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরির্দশন শাখা। বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক এ বি এম মঈনুল হোসেন বলছিলেন, আমরা পরিদর্শন করছি। তবে বাস্তবতা হলো এটি কোনভাবেই আমরা বা সরকার পরিচালনা করতে পারেনা। সেভাবে কোন আইন নেই। তার পরেও যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে আমরা তা মন্ত্রণালয়কে দেব। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলছিলেন, দেশে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে। কোনটিই সরকার পরিচালনা করেনা বা সরকার করতেও পারেনা। এগুলো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। যার মালিকানা বা কারিকুলাম কিছুই সরকারী নয়। তারপরও সরকার যেহেতু তথ্য চেয়েছে আমরা দেব। সরকার নিশ্চই একটি পথ বের করবে। আমরা শীঘ্রই পরিদর্শন রিপোর্ট জমা দিতে পারব।

এখানে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের ও লেভেল এবং এ লেভেল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হয়। Edexcel International Examination KZ©…K c«YxZ the International General Certificate of Secondary Education (IGCSE) এর পাঠ্যক্রমে ও লেভেল এবং এ লেভেল পরীক্ষা নেয়া হয়। এখানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত তুরস্কের ভাষা শেখানো হয়। অমুসলিমদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা আবশ্যিক নয়। এখানে পাঠ্যক্রম পদ্ধতিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028069019317627