'বর্তমানে যারা ছাত্র সংসদ দেখাশোনা করছেন, কলেজের প্রতিটি কাজেই তারা সহায়তা করছেন। শিক্ষার্থীদের হয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন। তাই ছাত্র সংসদের অনুপস্থিতি বা নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজনও অনুধাবন করতে পারিনি।'
কাছে এমনই বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি এ কলেজে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাই ঠিক কী কারণে গত ২৮ বছর কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় না, তা জানাতে পারলেন না তিনি। তবে বললেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নির্বাচন হয়ে গেলে নির্দেশনা পেলে কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্র সংসদ না থাকলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা কার্যক্রম হয়ে থাকে, যা কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সম্পন্ন করেন বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগ ছাড়া এ কলেজে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নেই বা থাকলেও দৃশ্যমান নয়।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, তোলারাম কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই। তবে তিনি চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো অধ্যক্ষের কাছে তুলে ধরতে এবং সেগুলোর সমাধান করতে। তিনি নিজেও এই কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি দাবি করেন, এখন সময় এসেছে তোলারাম কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশও রয়েছে। অচিরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য তিনি কলেজ প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২৮ বছর আগে। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল। সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন যথাক্রমে আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল ও জাকিরুল আলম হেলাল। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া উচিত বলে জানালেন তারা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাদল বললেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া আদায়ে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল বললেন, ছাত্র সংসদ থাকলে শুধু শিক্ষার্থীদের দাবিই আদায় হয় না, নতুন নেতৃত্বও সৃষ্টি হয়।
আগামী দিনে রাষ্ট্র ও সমাজে ভূমিকা রাখবে এমন নেতা গড়ে তুলতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তোলারাম কলেজে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। ১৪টি বিষয়ে অনার্স রয়েছে। আরও তিনটি বিষয়ে অনার্স চালু হবে অচিরেই। কলেজটিতে পদ কম থাকায় রয়েছে শিক্ষকের স্বল্পতা। যেখানে প্রতিটি বিষয়ে কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন, সেখানে রয়েছেন সর্বোচ্চ আটজন। একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে, যেটির কাজ শেষ হলে শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা দূর হবে। বর্ষায় কলেজের ভেতর ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো আনুষ্ঠানিক ফোরাম নেই। সংস্কৃতি ও ক্রীড়াচর্চাও ব্যাহত হচ্ছে ছাত্র সংসদ না থাকায়।
কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী হালিমা আহমেদ বলেন, কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ থাকলে তা শিক্ষার্থীদের ছোটখাটো নানা সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতো। তবে এখন যারা ছাত্র সংসদের হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা নানা কাজ করলেও চাপ দেওয়া যায় না। কারণ, তারা নির্বাচিত নন।
সৌজন্য: সমকাল