শর্ত পূরণ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছিলেন মো. মামুনুর রশিদ। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তিও হন। ক্লাসও করেছিলেন কয়েকটি। এর কয়েক দিন পরই তাকে জানানো হলো, স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা নেই তার। ফলে ভর্তি বাতিল হয় এ শিক্ষার্থীর।
শুধু মামুনুর রশিদ নয়, ত্রুটিপূর্ণ ভর্তি পদ্ধতির কারণে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন আরো অনেকে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ‘মাস্টার অব সোস্যাল সায়েন্সেস ইন প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ’ বিষয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয় ঢাবির সংশ্লিষ্ট বিভাগ। আবেদনের যোগ্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থীর কমপক্ষে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি (তিন বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রির ক্ষেত্রে মাস্টার্স ডিগ্রি) থাকতে হবে। সব পরীক্ষায় কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। গ্রেডিং পদ্ধতিতে জিপিএ/সিজিপিএ ৪-এর স্কেলে ২ দশমিক ৭৫ অথবা ৫-এর স্কেলে ৩ থাকতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া শর্ত পূরণ করে ভর্তি আবেদন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের স্নাতক মো. মামুনুর রশিদ। এরপর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চূড়ান্ত ফলাফলের তালিকায় স্থান পান তিনি। এ সময় মামুনুর রশিদসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী সনদের সমতা নিরূপণ সাপেক্ষে ভর্তির জন্য যোগ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
এরপর সমতা নিরূপণ সনদ ছাড়াই ২৪ মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা আবেদনকারীদের ভর্তি নেয় বিভাগ। এজন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা করে জমাও নেয়া হয়। ভর্তির পর ক্লাসেও অংশ নেন এসব শিক্ষার্থী। ভর্তির প্রায় দুই মাস পর ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত সমতা নিরূপণ কমিটির সভায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের স্নাতক মো. মামুনুর রশিদকে ভর্তির অযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ফলে ভর্তি সম্পন্ন ও ক্লাসে অংশ নেয়ার পরও ভর্তি বাতিল হয়েছে তার।
এভাবে ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে ভর্তির কারণে সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষেই একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো উচিত। আপনি ভর্তি করাবেন, ক্লাস করাবেন, কয়েক দিন পর বলবেন, তুমি ভর্তির যোগ্য না। এটা তো শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো পদ্ধতি হতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুধাংশু শেখর রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশী ডিগ্রির ক্ষেত্রে সনদের সমতা নিরূপণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এজন্য একটি উচ্চতর পর্যায়ের কমিটিও রয়েছে। কমিটির সভায় ওই শিক্ষার্থী ভর্তির অযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত এসেছে। তাই ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হবে। ভর্তি বাবদ দেয়া অর্থ তিনি ফেরত পাবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি— সব পর্যায়ের ভর্তির জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশী ডিগ্রিধারীদের সমতা নিরূপণ সনদ নিতে হয়। এক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষার আগেই সমতা নিরূপণ কমিটির একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ভর্তিচ্ছুদের যোগ্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর স্নাতকোত্তরের ক্ষেত্রে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা করে সমতা নিরূপণ কমিটির সভা আহ্বান করা সম্ভব হয় না। তাই কয়েক মাস অন্তর এ সভা ডাকা হয়। যদিও অনেক সময় বিভাগ ও ইনস্টিটিউট এ সভার জন্য অপেক্ষা না করে ভর্তি করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সমতা নিরূপণ কমিটির সভায় কেউ অযোগ্য বলে বিবেচিত হলে ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যোগ্যতা যাচাই ও সমতা নিরূপণ কমিটির আহ্বায়ক আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সমতা নিরূপণ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। যে বিভাগ এ কাজ করেছে তারা ঠিক করেনি। যে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে, তার সঙ্গেও সুবিচার হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সমতা নিরূপণ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া ভর্তি নিলে পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী অযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের দায়িত্ব হলো আবেদনকারীর যোগ্যতা পরিপূর্ণভাবে পূরণ হওয়া সাপেক্ষে ভর্তি করানো। কারণ সমতা নিরূপণ কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।