ঝালকাঠির রাজাপুর থানার ভেতরে এক মাদরাসাছাত্রীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আবুল কালামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন নির্যাতিত ছাত্রীর মা আম্বিয়া বেগম। আদালতের বিচারক শেখ আনিছুজ্জামান রাজাপুর থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে লিপিবদ্ধ করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজাপুরের পুটিয়াখালী গ্রামের আঙ্গারিয়া দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়া খাতুন। তার বাবা কাসেম হাওলাদার একজন মৎস্যজীবী, মা আম্বিয়া বেগম গৃহিণী। গত ১৭ মার্চ বিকালে আম্বিয়া বেগমকে মারধর করে তার লাগানো বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে নিয়ে যায় প্রতিবেশী নুরুজ্জামান বেপারী ও তাদের সহযোগীরা।
এ ব্যাপারে গত ১৮ মার্চ আম্বিয়া বেগম তার মেয়ে রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে রাজাপুর থানায় মামলা করতে যান। এ সময় থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবুল কালাম তাকে ওসির সাথে দেখা করতে বাধা দিয়ে বলেন, কাগজপত্র আর পাঁচ হাজার টাকা আমার কাছে রেখে যান, যা করার সব আমি করে দেব।
আম্বিয়া বেগম টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যান। ঘটনার তিন-চার দিন পার হলেও কোনো মামলা না হওয়ায় আম্বিয়া বেগম এএসআই আবুল কালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। দুই-তিন দিন পর আম্বিয়া বেগম রাজাপুর থানার সামনে এসে আরও পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করেন। দুই দফায় টাকা লেনদেনের কথোপকথনের বিষয়টি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখে আম্বিয়া খাতুনের মেয়ে রাবেয়া খাতুন।
এএসআই আবুল কালাম দশ হাজার টাকা নিলেও রাজাপুর থানায় মামলা রেকর্ড না করিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি তদন্তের অনুমতি চেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন।
জিডির বিষয়ে আম্বিয়া বেগমকে তলব করে আদালত। গত ৭ এপ্রিল আম্বিয়া বেগম আদালতে হাজির হয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন আদালতকে। পরের দিন একই আদালতে গাছ কেটে নেয়া ও মারধরের বিষয়ে আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন আম্বিয়া বেগম। আদালতের বিচারক সিআর মামলাটি রাজাপুর থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন।
১৬ এপ্রিল এ বিষয়ে রাজাপুর থানায় এফআইআর রেকর্ড হয়। এতে আম্বিয়া বেগমের ওপর ক্ষিপ্ত হন আবুল কালাম। মোবাইল ফোনে কথপোকথন রেকর্ডের বিষয়টি জানতে পেরে গত ২৪ এপ্রিল মা-বাবাসহ কিশোরীকে রাজাপুর থানায় ডেকে এনে বকশির কক্ষে নিয়ে তার মায়ের সামনে মারধর করে এএসআই আবুল কালাম ও এক নারী কনস্টেবল। এতে কিশোরীর ডান পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে।
মারধরের পর কিশোরীর মোবাইল থেকে মেমোরি কার্ড জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় আবুল কালাম। এ সময় তিনি বলেন, তোর এত বড় সাহস, পুলিশের কথা রেকর্ড করে রাখস।’ নানা অশ্লীল গালিগালাজ করে প্রায় দেড় ঘণ্টা থানায় আটকে রাখে। বহু অনুনয়-বিনয়ের পর হাসপাতালে না যাওয়ার শর্তে কিশোরীকে ছেড়ে দেয় আবুল কালাম।
পুটিয়াখালী বাজারের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ানোর পরও সে সুস্থ না হওয়ায় গত ২৭ এপ্রিল রাবেয়াকে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করানো হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে ঝালকাঠির আদালতে একটি মামলা করেন। বাদী পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট শামীম আলম বাবু ও মো. আক্কাস সিকদার।
এ ব্যাপারে রাজাপুর থানার এএসআই মো. আবুল কালাম বলেন, থানায় আটকে কোনো মেয়েকে নির্যাতন করা হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।