ঢাকা শহরের কাছে ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ড. আমিরুল ইসলামকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা অধিদপ্তরের বছরের পর বছর থাকা একজন নারী সহকারি পরিচালকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। প্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে। সাবেক প্রকল্প পরিচালক অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এমন কোনো প্রমাণ পায়নি কমিটি।
এদিকে এই প্রকল্পের পরিচালক পদ বাগানোর জন্য শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন বিতর্কিত কর্মকর্তার নাম শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা মনে করেন, প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্যরা পরিচালক হওয়ার জন্যই যত অপপ্রচার হয়েছে গত কয়েকমাস ধরে।
অধিদপ্তরের দুইজন বিএনপি-জামাতপন্থি উপপরিচালক ও ১০ স্কুল প্রকল্পেরই একজন কর্মকর্তার নাম পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। তাদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের সদস্য হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বেসরকারি কলেজ শাখার দুইজন কর্মকর্তা। কলেজ শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা স্টেট কলেজের অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত করানোর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে গোপনে পদত্যাগ করানোর ফাইল অনুমোদন, পুরানা পল্টন গার্লস কলেজের অভিযোগ গোপন করা, এমপিওর আশায় থাকা কতিপয় ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকের সঙ্গে দহরম মহরমের তথ্য পাওয়া গেছে।
শিক্ষা ভবনে আওয়ামী লীগমনস্ক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে নানা অভিযোগ ও ফেসবুকে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। দুর্নীতিবাজ, জামাত, বিএনপি, সুবিধাবাদী ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের মিছিল করা কতিপয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়া বাড়ৈ সিন্ডিকেটের একজন সাবেক পরামর্শক কলকাঠি নাড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিনকে সভাপতি করে গত মার্চে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটির দুই সদস্য হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং) অধ্যাপক আমির হোসেন এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের অডিট কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন। তদন্তের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরেজমিন পরিদর্শন, কাগজপত্র বিশ্নেষণ অংশে মূল অভিযোগ তুলে ধরা হয়। ছয়টি প্রকল্পে গাছপালা ও অবকাঠামো (যদি থাকে) খাতে বরাদ্দ বেশি ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের এ অংশে আরও বলা হয়, 'যদিও টাকাটি এখনও খরচ হয়নি বা একেবারে সরকারের আর্থিক কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে যে কোনো দুর্নীতির শুরু হয় প্রাক্কলন তৈরির সময় থেকে। অর্থাৎ সঠিকভাবে চিহ্নিত না হলে বা ধরা না পড়লে এই টাকা যে কোনো চ্যানেলে সময়ের পরিক্রমায় সিন্ডিকেটের আত্মসাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।'
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, 'সার্বিক দিক বিবেচনায় দেখা যায় যে, ঢাকার সন্নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের সম্ভাব্য ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ১০১ কোটি টাকার ওপরে অতিরিক্ত প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জের একটি প্রকল্পে নালা শ্রেণি ভিটি শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বেশি ধরা হয়েছে।'
তবে জানা গেছে, আরডিপিতে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করেছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। তাদের জমা দেওয়া প্রাক্কলনের ভিত্তিতে সম্ভাব্য বায় বরাদ্দ অনুযায়ী আরডিপিপি প্রস্তুত করছেন প্রকল্প পরিচালক।