দাশিয়ারছড়ায় এক শিক্ষকের দুই মাদরাসায় চাকরি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামে দাশিয়ারছড়ায় একই ব্যক্তি দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এনিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।

জানা গেছে, দাশিয়াছড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদরাসার সহকারি মৌলভী আমিনুল ইসলাম এমপিওভুক্ত শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদরাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আমিনুল ইসলাম মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদরাসায় চাকরি করছেন ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। আর ছিটমহল বিনিময়ের পর ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় গড়ে ওঠে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দাশিয়ারছড়ার কালিরহাট এলাকায় তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদরাসা গড়ে তোলা হয় ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। তখন এই মাদরাসার সুপার হিসেবে যোগ দেন আমিনুল ইসলাম। অথচ এর দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদরাসা এমপিওভুক্ত হবার পর থেকে সেখান থেকে তিনি নিয়মতি বেতন-ভাতা তুলছেন।

আগের প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি না নিয়ে দুই মাদরাসায় একই সাথে চাকরি করার বিষয়ে এলাকাবাসী ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। সেই তদন্তে আমিনুল ইসলামের দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিনুল ইসলাম দুটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষা প্রতিষ্টানের জমি নিজনামে দলিল করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০জুন আমিনুল ইসলাম বিদ্যালয়ের প্যাডে লিখিতভাবে ইস্তফা দেন। এছাড়া একটি ষ্ট্যাম্পে ১২জন শিক্ষকের কাছ থেকে ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা বুঝে নিয়েছেন বলেও তথ্য রয়েছে।

তবে গত ১৪ জানুয়ারি জানুয়ারি সরকার দাশিয়ারছড়ার শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদরাসাসহ ৩টি মাদরাসাকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়ার পর আমিনুল ইসলাম আবারো ওই মাদরাসার সুপারের পদে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি এই দায়িত্ব নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদরাসার শিক্ষক আমজাদ হোসেন, এরশাদুল হক, আবু বকর সিদ্দিক, আঞ্জুয়ারা বেগমসহ অনেকেই জানান, মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর চাকরির জন্য আমিনুল ইসলামকে বিভিন্ন অংকের টাকা দেয়া হয়েছে। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তিনি মাদরাসা থেকে অব্যহতি নিয়ে চলে যান। আবার ফিরে এলেও তিনি সেই টাকা ফেরত দেননি।

শেখ ফজিলাতুন্নেসা দাখিল মাদরাসার আরেক সুপার মাওলানা মো: শাহনুর আলম বলেন, আমিনুল ইসলামের অব্যহতির পর আমাকে সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু মাদরাসাটি জাতীয়করণ ঘোষণার পর জানুয়ারি মাসে জোরপূর্বক সে সুপারের চেয়ারে বসেন এবং মাদরাসার কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছেন। 

অন্যদিকে মধ্যকাশিপুর দ্বি-মুখি দাখিল মাদরাসা থেকে আমিনুল ইসলাম এখনো অব্যহতি নেননি বলে জানা গেছে। 

চাকুরিরত অবস্থায় আরেকটি মাদরাসার সুপারের দায়িত্ব কিভাবে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত একটি নিষেজ্ঞার চিঠি পেয়েছি। তাই এই বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারবো না। 

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। আসলে বিধি মোতবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

তবে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, এমন একটি অভিযোগ এসেছে। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক এবং ন্যায় বিষয়টি তুলে ধরতে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061531066894531