বন্যা আরও ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সদস্যরা বলছেন, সরকার এ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন এবং প্রস্তুত রয়েছে। বর্তমানে দেশের ২৮ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণের গতি আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তারা।
গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এসব আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি এবি তাজুল ইসলাম। বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), আফতাব উদ্দিন সরকার, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জুয়েল আরেং, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং কাজী কানিজ সুলতানা।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি জানান, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বর্তমান তৎপরতা ও প্রস্তুতিতে কমিটি সন্তুষ্ট। ইতিমধ্যে দেশের ২৮ জেলা বন্যার কবলে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীনের পানি যখন পুরোদমে আসা শুরু হবে, তখন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সরকারের কাছে আগাম তথ্য রয়েছে এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে।
বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সব স্থানে সমানভাবে বা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিছু কিছু স্থানে না পাওয়ার অভিযোগ থাকা অসম্ভব কিছু নয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নজরদারি করা হচ্ছে। ত্রাণ তৎপরতা আরও বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
এদিকে বৈঠকে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণের পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মত না নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সিদ্ধান্তে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হচ্ছে। যে কারণে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় স্থানে এসব অবকাঠামো গড়ে উঠছে। এতে একদিকে সরকারের অর্থ অপচয় হয়, পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য প্রকৌশলীদের মাধ্যমে সম্ভাব্যতা যাচাই করে এগুলো নির্মাণ ও স্থান নির্বাচনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে তাজুল ইসলাম বলেন, এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া গমের পরিবর্তে স্থানীয় গুদাম থেকে চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে; কিন্তু গমের তুলনায় বর্তমানে চালের দাম কম। ফলে প্রকল্পের প্রধান বাধ্য হয়ে অনিয়মে জড়িত হন।
তিনি বলেন, একইভাবে সরকারের ৪০ দিনের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচি বাস্তবায়নেও হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। কারণ নিয়মানুযায়ী শ্রমিকদের নামে ব্যাংক হিসাবে এই টাকা যায়। সরকারের উদ্দেশ্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে নগদ টাকা পৌঁছানো। কিন্তু একজন শ্রমিকের মাথাপিছু বরাদ্দ অর্থে বাস্তবে কোনো শ্রমিক কাজ করেন না। এই কাজ করাতে হয় মেশিন দিয়ে। আবার মেশিন দিয়ে কাজ করালে অর্থ পাওয়া যায় না। কারণ সরকারের অর্থ শ্রমিকের নামে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে চলে যায়। চেয়ারম্যান ওই অর্থ তুলতে পারেন না। ফলে পুরো বিষয়টি হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে চলে যায়। এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে পারে না। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।