দুই ছাত্রের নম্বরপত্রে বালিকা বিদ্যালয়ের নাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মাহমুদুল হাসান অনিক ও মুশফিকুর রহিম রাফিন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিল তারা। এ প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন না থাকায় কর্তৃপক্ষ পাশের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের নিবন্ধন করায়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বোর্ডের অধীনে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাসও করে এ দুজন। কিন্তু তাদের নিবন্ধন ও প্রবেশপত্রে নাম আসে ‘ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি’। রোববার (১১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন মো. আব্দুল হালিম । 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  বালক হয়েও বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নাম আসার পর তারা শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানায়। তখন কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝায় যে বিদ্যালয়ের নাম ভুলক্রমে হয়েছে, সব ঠিক হয়ে যাবে। 

পরে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান শাখা থেকে অংশ নিয়ে দুজনই পাস করে। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও নম্বরপত্রেও বিদ্যালয়ের নাম আসে সেই ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি।

ফুলবাড়িয়া শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের আরেক শিক্ষার্থী তালহা জরদিস আদিবও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস করে নম্বরপত্রে ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি নাম নিয়ে।

বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও কাগজপত্রে বালিকা বিদ্যালয়ের নাম আসার এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে অনুসন্ধানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি। বিদ্যালয়টির ইআইআইএন নম্বর ১১১৪৫৩। কিন্তু বিদ্যালয়ের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ভালুকজান মডার্ন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়। স্থাপিত ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ। সেখানে ‘বালিকা’ শব্দটি লেখা নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে বিদ্যালয়টির নাম রয়েছে ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রগ্রামের স্টাডি সেন্টার রয়েছে এ বিদ্যালয়টিতে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ফুলবাড়িয়া শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনুমোদন নেই। আবার নন-এমপিওভুক্ত ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমির শিক্ষার্থী নেই। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষই যোগাসাজশে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই বছরে এসএসসিতে ১৪৪ জন এবং জেএসসিতে ৪৮ জন ছাত্র এভাবে পাস করেছে। তাদের সনদ ও নম্বরপত্রে ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমির নাম এসেছে। বালক হয়েও বালিকা বিদ্যালয়ের সনদ পাওয়ায় ওই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে তাদের বিব্রত হতে হয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় আছে তারা।

শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান রাফিন বলে, ‘রেজিস্ট্রেশন ও অ্যাডমিট কার্ডে ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি নাম দেখে স্যারদের বিষয়টি জানিয়েছি। স্যারেরা বলেছেন ভুলে চলে আসছে, এটা কোনো সমস্যা না। এখন এসএসসির মার্কশিটে একই নাম রয়েছে। লজ্জায় কারো সঙ্গে বিষয়টি শেয়ারও করতে পারি না। যেহেতু মার্কশিটে বালিকা বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে, সার্টিফিকেটেও একই নাম আসবে। বালক হয়ে বালিকা বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটে চাকরির ক্ষেত্রে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটা নিয়ে একধরনের চিন্তার মধ্যে আছি।’

মো. নুরুল ইসলাম নুরু চৌধুরী নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘দুই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছি। সমাধান না করলে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমি থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মানবিক ও বিজ্ঞান শাখা থেকে ৮১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে মানবিক শাখায় ২৯ জনের মধ্যে ১৬ জন বালক। বিজ্ঞান শাখায় ৫২ জনের মধ্যে ২৭ জন বালক।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬৩ শিক্ষার্থী। মানবিক শাখায় ১৮ জনের মধ্যে ৯ জন বালক। বিজ্ঞান শাখায় ৪৫ জনের মধ্যে ৩৫ জন বালক।

২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টিতে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ২২ জন। এর মধ্যে ১৩ জন বালক। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জেএসসি পরীক্ষায় ২৬ জন অংশ নেয়। এর মধ্যে ১৭ জন বালক রয়েছে।

ফুলবাড়িয়া শহীদ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে ভালুকজান মডার্ন গার্লস একাডেমি নাম আসার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন কোনো সমস্যা হবে না, তিনি সহজ শিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন।’

এ বিষয়ে ভালুকজান মডার্ন বালিকা একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. ওমর ফারুক বলেন, “একসময় এটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল, দুই বছর আগে বিদ্যালয়ে রেগুলেশন করে ‘সহজ শিক্ষা’র জন্য মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে বোর্ডে চিঠি গেলেই সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এটা প্রধান শিক্ষকের উদাসিনতা, অভিভাবকরা আসছিল অফিসে, প্রধান শিক্ষককে ১৫ দিনের সময় দিয়েছি বিষয়টি সমাধান করার জন্য। তবু লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032260417938232