নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচআনি ঋষিপাড়া ও রামচন্দ্রদী গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে পাঁচআনি ঋষিপাড়া গ্রাম পুরুষশূন্য। ওই গ্রামের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিপক্ষের মামলা-হামলার ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। শনিবার দুপুরে সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে এ তথ্য জানা যায়। তবে থানার ওসি আক্তার হোসেন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি পুরুষশূন্য বিষয়টি গ্রামবাসীর সাজানো গল্প বলে মন্তব্য করেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ১ নভেম্বর রাতে পাঁচআনি ঋষিপাড়া গ্রামের অস্থায়ী মন্দিরে শ্যামা কালীপূজায় আনন্দ উল্লাস চলছিল। রামচন্দ্রদী গ্রামের রবি চন্দ্র দাস অতিরিক্ত মাতলামি করার কারণে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়ি চলে যেতে বলে। বিষয়টিতে রবি অপমানিত হয়ে তার গ্রাম রামচন্দ্রদী গিয়ে তাকে পিটিয়ে মন্দির থেকে বের করে দিয়েছে বলে প্রচার করে। এর জের ধরে ৩ নভেম্বর সকালে প্রতিমা বিসর্জনের সময় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেদিন রাতে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে দু'পক্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের মধ্যে রামচন্দ্রদীর অজিতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পাঁচআনির ঋষিপাড়া গ্রামের বিশ্বনাথকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত অজিতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। মামলা-হামলার ভয়ে পাঁচআনি ঋষিপাড়া গ্রাম এখন পুরুষশূন্য।
পাঁচআনি ঋষিপাড়া গ্রামের রানী চন্দ্র দাস জানান, হামলার ভয়ে তার স্বামী ও ছেলে এখন বাড়িছাড়া। ওই গ্রামের রাজকুমারী জানান, তার মেয়ে শিমু রানী গোপালদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সে এক সপ্তাহ ধরে হামলার ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। রাস্তায় প্রতিপক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে প্রতিনিয়ত মহড়া দিচ্ছে। ওই গ্রামের সদাসদি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শান্ত চন্দ্র দাস জানায়, সে হামলার ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। সুলেখা রানী, সুনীল রানী, রেখা দাসসহ আরও অনেকে একই অভিযোগ করে বলেন, তাদের স্বামী-সন্তানরা হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িছাড়া।
পাঁচআনির গ্রামের কাউকে হামলার ভয় দেখানোর বিষয়টি অস্বীকার করে রামচন্দ্রদী গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য নগরবাশি জানান, দু'পক্ষের মধ্যে মীমাংসার জন্য ডাকা হলেও পাঁচআনির লোকজন সাড়া দিচ্ছে না। যার ফলে বিষয়টির সুষ্ঠু মীমাংসা করা যাচ্ছে না।
আড়াইহাজার পৌরসভার মেয়র এম এ হালিম সিকদার বলেন, প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মের দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তবে আড়াইহাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র সংঘর্ষের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, একশ' টাকা ধারদেনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ব্যাপারে দু'পক্ষই মামলা করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।