দুই ভুয়া পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নিলেন চার কর্মকর্তা!

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

সদ্য সমাপ্ত পিইসি পরীক্ষায় আঁখি, শিমু ছাড়াও আরো তিন শিক্ষার্থী কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুন্ধানে ধরা পড়ে। পরে সাধারণ ক্ষমায় তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর এই পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কৃত দেখিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের সুযোগে আজ শনিবার তাদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। শুধু তাদের জন্য কেন্দ্রে ছিলেন শিক্ষা কর্মকর্তাসহ মোট চার কর্মকর্তা।

জানা যায়, আজ শনিবার উপজেলার নান্দাইল রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে পাঁচ জন পরীক্ষার্থীর জন্য কেন্দ্র তৈরি করা হয়। প্রতি বেঞ্চে দুইজনের জন্য বরাদ্ধ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষার্থী ছিল মাত্র দুইজন। আঁখি আর শিমু। তাদের জন্য নিয়োজিত ছিল কেন্দ্র সচিব, কক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ও কক্ষ পরিদর্শক। এছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউপিইও) মোহাম্মদ আলী সিদ্দিক উপস্থিত থেকে পরীক্ষা কার্যক্রম তদারকি করছিলেন। কেন্দ্র সচিবের অনুমতি নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায় আঁখি ও শিমু বেঞ্চে বসে এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। কেমন পরীক্ষা দিচ্ছ জানতে চাইলে দু’জনেই  বলে ভালো।

পিইসি পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে বলেছিলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড় এখন কিভাবে পরীক্ষা দিচ্ছ এমন প্রশ্ন করলে আঁখি জানায়, ‘স্যার আমি অন্য ইস্কুলে ফোর পর্যন্ত পইর‌্যা আর পড়ছিলাম না। অহন স্যারের (পূর্বকান্দা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) কথায় পরীক্ষা দিতাছি।’ অন্য তিন জন কোথায় জানতে চাইলে আঁখি বলে, ‘হেরা সেভেন-এইটে পরীক্ষা দিছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্দ আলী সিদ্দিক বলেন, উচ্চ আদালতের একটি আদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওইসব পরীক্ষার্থীরা তো বহিষ্কার হয়নি, তারা ভুয়া পরীক্ষার্থী ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। 

পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশের কক্ষে বসা ছিলেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মইন উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’জন পরীক্ষার্থীকে পাইছি বাকিদের বাড়িতে পাই নাই। এই সময় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই এই সব নিয়া লেইখেন না। ব্যবস্থা একটা অইবো।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার শেষ প্রান্ত কেন্দুয়া উপজেলার লাগোয়া গ্রামটির নাম পূর্বকান্দা। নান্দাইল উপজেলার ৫নং গাঙাইল ইউনিয়নে অবস্থিত। ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়ের নামে ৪০ শতক জমি লিখে দিয়েছেন। পরে ৬০ ফুট লম্বা একটি টিন সেড ঘর তুলে নাম রাখা হয় পূর্বকান্দা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে এটির কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই। ওই এলাকার প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া প্রায় শিক্ষার্থীই পাশের কেন্দুয়া উপজেলার কতুবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কথা সাহিত্যকি হুমায়ুন আহম্মেদের বিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। 

জঙ্গলঘেঁষা একটি ডোবার পাশেই টিনসেড ঘর। চারটি দরজা (সবগুলো খোলা) বিশিষ্ট এই ঘরটির চারপাশে আগাছায় ভরা। ঘরের ভিতর স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। নেই কোনো সাইনবোর্ড, শিক্ষার্থী ও নেই কোনো বেঞ্চ-টেবিল; এমনকি পাঠদানের উপকরণও নেই। একটি চক্রের যোগসাজসে শিক্ষা অফিসের একজন কর্মচারী ও  সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কাগজে কলমে তদন্ত দেখিয়ে ১২০ জন শিক্ষার্থীর বইয়ের চাহিদা পাঠানোসহ পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতির ব্যবস্থা করেন। অন্যদিকে ওই পাঁচ জন পরীক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় (মডেল টেস্ট) অংশ না নিলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের ডেসক্রিপটেড রোল (ডিআর) তালিকায় ওই নাম ছিল। কিভাবে তাদের নাম ডিআরভুক্ত করা হলো সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কেউ দিতে পারেননি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্র তত্ত্বাবধায়ক মো. মতিউর রহমান বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা তাদের পরীক্ষা নিচ্ছি। নকল করার অভিযোগে যেসব পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছিল। মহামান্য আদালত তাদের পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045998096466064