বোর্ডের নির্দেশনা অমান্যদুই শতাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

কোনো শিক্ষক পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য প্রধান পরীক্ষক বা পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে অবশ্যই তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে নিয়ম বেঁধে দিলেও তা মানেননি চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ে 'ক্ষমতাধর' দুই শতাধিক শিক্ষক! নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করেননি তারা। এসব ক্ষমতাধরের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বোর্ডসংশ্নিষ্টরা। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এদিকে, শাস্তি থেকে বাঁচতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের অনেকে অসুস্থতা, ব্যক্তিগত কারণসহ নানা অজুহাতের আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বোর্ডের অধীনে থাকা শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়টি বোর্ড থেকে জানানো হয়। বোর্ডে এসে নিজেদের উত্তরপত্র সংগ্রহ করতেও বলা হয় তাদের। কিন্তু নির্ধারিত দিনে অন্য পরীক্ষকরা উত্তরপত্র সংগ্রহ করলেও দুই শতাধিক শিক্ষক তা করেননি। এ বিষয়ে বোর্ডের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগও করেননি তারা। তাদের এমন আচরণে অবাক হয়েছেন বোর্ডসংশ্নিষ্টরা। দুই শতাধিক শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে বোর্ড। পরে বাধ্য হয়ে অন্য শিক্ষকদের বাড়তি উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে বাড়তি চাপে পড়েন কিছু পরীক্ষক।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম বলেন, 'দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্যই মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপনকে অমান্য করে দায়িত্ব পেয়েও বোর্ডকে না জানিয়ে উত্তরপত্র সংগ্রহ করেননি দুই শতাধিক শিক্ষক। নির্দেশনা অমান্য করা শিক্ষকরা নিজেদেরকে বোর্ডের চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর মনে করেন। তারা অনেক বড় অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এসব ক্ষমতাধর শিক্ষকের অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।' শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে কোনো শিক্ষক পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য প্রধান পরীক্ষক বা পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে অবশ্যই তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

বোর্ডের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'যেসব শিক্ষক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে অমান্য করে দায়িত্ব পালন করেননি, তারা বোর্ডকে তোয়াক্কা করেন না। এসব শিক্ষক একেকজন নানাভাবে ক্ষমতাধর। এর আগেও তারা নানা অনিয়ম করেছেন। কিন্তু একের পর এক অনিয়ম করলেও বোর্ড কেবল তাদের শোকজ করে দায়িত্ব শেষ করেছে। এবার মন্ত্রণালয় যদি তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করে; তবে এ ধরনের অপরাধ আগামীতে আরও অনেকে করতে উদ্যোগী হবেন।'

বাড়তি উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব পাওয়া কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ক্ষমতাধর বলেই দুই শতাধিক শিক্ষক বোর্ডের নির্দেশনাকে অমান্য করেছেন। কোনো কিছু না জানিয়ে ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র সংগ্রহ না করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অনেক বড় অপরাধ করেছেন। এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা পালন করে শিক্ষকরা কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। হঠাৎ বাড়তি উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব পেয়ে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে আমাদের, যা কখনও কাম্য নয়।'

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, 'শিক্ষকদের এমন আচরণে আমরা বিব্রত। সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু তারা কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেননি। উত্তরপত্র যে সংগ্রহ করবেন না- সে বিষয়টিও আমাদের জানাননি। কিছু না জানিয়ে তারা দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত ছিলেন। এখন মন্ত্রণালয় তাদের শাস্তি নির্ধারণ করবে।'

দায়িত্ব পালন না করা দুই শতাধিক শিক্ষককে বোর্ড থেকে শোকজ করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের শাস্তি থেকে বাঁচতে তাদের অনেকে অসুস্থতা, ব্যক্তিগত কারণসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে বোর্ডকে চিঠির উত্তর দিচ্ছেন। তবে বোর্ডসংশ্নিষ্টরা বলছেন, অজুহাত দেখালে হবে না; এর পেছনের যাবতীয় বিষয় তদারকি করা হবে। যিনি অসুস্থতার বিষয় জানাচ্ছেন, তাকে অসুস্থ থাকার যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ বোর্ডের কাছে জমা দিতে হবে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003242015838623