লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওমর ফারুককে অধ্যক্ষের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২৯ জুলাই মাদরাসা গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে নৈতিক পদস্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদরাসা অর্থ ও সম্পদ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
চর আলেকজান্ডার কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তৈয়ব আলী জানান, মাদরাসাটি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী রামগতির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলীর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্যের একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগগুলো প্রমাণিত হয়। পরে তদন্ত কমিটির সুপারিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব অনুমতি নিয়ে গত রোববার মাদরাসা গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধিমোতাবেক তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ ওমর ফারুক ২০১১ খ্রিস্টাব্দে আলিম পরীক্ষায় বহিষ্কার হওয়া চারজন পরীক্ষার্থীর গোপনে পরীক্ষা নেন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদরাসা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার প্রায় ১০ হাজার অতিরিক্ত উত্তরপত্র বোর্ডে জমা না দিয়ে মাদরাসার ভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় তা ব্যবহার করেন। তিনি মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত লিপিবদ্ধ করতেন না, মাদরাসার ব্যাংক হিসাবেও তা জমা করতেন না। এ ছাড়া তিনি ব্যাংক হিসাব (একাউন্ট) থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন। তিনি মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের একটি অংশকে ব্যবহার করে তিনি ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেন। এতে মাদরাসার শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে মাদরাসা গভর্নিং বডির অনুমোদন ছাড়া গোপনে তিনি আলেকজান্ডার কামিল মাদরাসা (ওয়াক্ফ) ট্রাস্ট গঠন করেন এবং তাকেই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টের সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি করে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাদরাসার এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় মুঠোফোনে তাদের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও এলাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়।
মাওলানা ওমর ফারুক তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, অভিযোগ তদন্তের সময় তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিকারের জন্য তিনি উচ্চ আদালতে মামলা করবেন।
এদিকে, লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘অধ্যক্ষ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্ত করা হয়েছে। সব তদন্তেই ওমর ফারুককে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু তিনি তদন্ত কমিটিকে তার বক্তব্য জানাননি। সব তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মামলাটি তদন্ত করছেন।’