দুর্নীতির লোভের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দুর্নীতিবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং লোভের জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। অনেকেই বলছেন দুর্নীতিবাজদের সাজা হয় না। এবারও ৬৩  শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। আমরা হয়তো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতি কমাতে পারিনি। এই ৬৩ শতাংশ সাজা কিন্তু এমনিতে হয়নি। এটি আমাদের সবার ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল। আগেও বলেছি, আজও বলছি, কোনো একক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। দুর্নীতি দমনের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯’-এর ওপর মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী সন্তান। তাই কমিশনের কর্মকৌশল প্রণয়নে সর্বপ্রথম আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আমরা আপনাদের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ধারণা, সৃজনশীল ভাবনা এবং সর্বোপরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের জন্য এ জাতীয় মতবিনিময় সভা এটাই প্রথম।

চেয়ারম্যানের সূচনা বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না রিফাত আরা বলেন, দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে দুর্নীতি করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান বলেন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা না গেলে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়। তিনি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরা রহমান বলেন, খাদ্যে ভেজাল দুর্নীতি। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এ দুর্নীতি করছেন এবং তারাই নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফারুক হোসেন বলেন, কৃষি ভর্তুকির অর্থ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পোঁছানোর আগেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি হয়।

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কিনা, এটি বড় প্রশ্ন। দুর্নীতিকে একটি চেইন অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, নিচের দিকে কর্মরত কর্মকর্তারা জানেন তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দুর্নীতিপরায়ন। তাই দুর্নীতি করলে কিছু হবে না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামস আসিফ চৌধুরী বলেন, দুদক স্কুল পর্যায়ে সততা সংঘ গঠন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এথিকস ক্লাব গঠনের আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা মহাজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং ফল চান। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টোটন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, দুর্নীতি যারা করেন তাদের ভয় ও লজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, একসময় বলা হতো অর্থই অনর্থের মূল। কিন্তু সব সময় নয়। অর্থ মানেই ক্ষমতা। অনেক সময় মানুষ অর্থের পেছনে ছুটে। এটাতে তারা এখন আর লজ্জা পায় না। তাই দুর্নীতিবাজদের লজ্জা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা এবং মূল্যবোধসম্পন্ন উন্নয়নের প্রয়োজন। তিনি বলেন, দুদককে ভয় পায় না এমন লোক হয়তো সমাজে নেই। তবে ভয় দিয়ে সবকিছু জয় করা যায় না।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়—বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি দমনের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একদিন বা এক বছরেই দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। এটি একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। এর মাধ্যমে দুর্নীতি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

আরও পড়ুন: স্কুলের দুর্নীতি ৫ হাজার কোটি টাকার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ ফেল করা শিক্ষার্থীকে প্রমোশন দিয়ে মানসম্মত শিক্ষাকে কলুষিত করা হচ্ছ। বাংলাদেশকে ২০৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর যে সুবিধা আছে তা পেতে মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

মতবিনিময় সভায়, দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম ও মো. মোজাম্মেল হক খান বক্তব্য দেন। 

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027408599853516