সার্ভার জটিলতায় যারা নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে পারেননি তাদের জন্য সুখবর। ৬ মে রাত বারোটার পর থেকে ৭ মে পর্যন্ত করা শিক্ষক-কর্মচারী আবেদনও গ্রহন করবেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে ৭ মে দুপুরে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘দুইদিন সময় বাড়ানোর পরও অনেকে আবেদন করতে পারেননি। আবার কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন করতে পেরেছেন, কয়েকজন পারেননি। সার্ভার জটিলতায়। আমরা এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ফেসবুক লাইভ দেখেছি। নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যাতে ঈদের আগে বেতন-ভাতা হাতে পান সে লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে যাতে ৭ মে পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। যেহেতু সার্ভার জটিলতায় দেরি হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয় অধিদপ্তর থেকে।
ঢাকার মিরপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ৭ মে দুপুরে দৈনিক শিক্ষাকে দেরিতে আবেদন করা তথ্য এবং থানা শিক্ষা অফিসের গড়িমসির খবর দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
নতুন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের আবেদন সময় গতকাল ৬ মে শেষ হলেও আজও এমপিওভুক্তির আবেদন করতে পারছেন শিক্ষকরা। সার্ভার ও সফটওয়্যার জটিলতায় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে না পারায় আবেদন গ্রহণের জন্য সফটওয়্যার খোলা রাখা হয়েছে।
আর ৭মে করা আবেদনগুলো অগ্রায়ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুনঃনির্ধারিত সূচি অনুসারে, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোর শিক্ষকদের আবেদনগুলো ৮ মে মধ্যে নিষ্পত্তি কত বলা হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। ৯ মের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের আবেদনগুলো নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। ১৩ মের মধ্যে এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করতে বলা হয়েছে আঞ্চলিক উপ-পরিচালকদের।
আর পুনঃনির্ধারিত সূচি অনুসারে কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ শিক্ষকদের আবেদনের শেষ সময় বাড়িয়ে ৭মে করা হয়েছে। ১৩ মের মধ্যে কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও আবেদন অগ্রায়ণ করতে বলা হয়েছে আঞ্চলিক পরিচালকদের।
এদিকে কয়েকজন উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এটি একটি মানবিক ব্যাপার শিক্ষকরা। বহুদিন যাবত এমপিওর জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের যতটুকু সম্ভব আমরা তাদের আবেদন অগ্রায়ন করব।
একজন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার আবেদন অগ্রায়ণের সময় ৮ মে। কোন শিক্ষক যদি শেষ মূহুর্তে আবেদন করলেও তাদের আবেদন আমরা অগ্রায়ণ করবো। কোন শিক্ষক যাতে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।
করোনার মধ্যেই নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, কোড নম্বর দেয়া ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদের আগেই বকেয়াসহ এমপিওর টাকা দেয়ার উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জরুরীভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদে সাথে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। সভার পর গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত তিনটি অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয় নতুন এমপিওভুক্ত ২ হাজার ছয়শ’র বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোড নম্বর দেয়া ও নিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার। মে মাসেই যেন তারা বেতন-ভাতা পান সেটাও বলা হয়। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন ইএমআইএস সেলের দুই/তিন জন কর্মকর্তার অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষন করায় মন্ত্রণালয়ের শুভ উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে বসছে। শিক্ষকরা বলছেন, সার্ভার অচল, ডাউন থাকা এবং দূর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। সবচাইতে বেশি অভিযোগ নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের। যেকোনও সমস্যার জন্য হটলাইনে দেয়া নম্বরগুলোর বেশিরভাই কলই কেউ রিসিভ করছেন না। বিশ থেকে ত্রিশ বার কল করার পর রিসিভ করে শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন কেউ কেউ। সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা আবেদন করতে না পারার অভিযোগ করছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে সময় বৃদ্ধি করা হলেও সার্ভার জটিলতায় অনেকে এখনো আবেদন করতে পারেননি।
