দেশপ্রেমিক হতে কি গান চাই? নাকি গান দেশপ্রেমিক করে তোলে?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশপ্রেমিক হতে কি গান চাই? নাকি গান দেশপ্রেমিক করে তোলে? দুটোই যদি সত্যি বলে ধরে নেই তবে দেশপ্রেমের মতো এমন স্পর্শকাতর বিষয়ের অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে না তো? আর সত্যিই যদি না হবে তবে কেন দেশাত্মবোধক গান? 

দেশাত্মবোধক গান:

যদিও বাংলা গানের ক্রমধারা শুরু হয়েছিল সেই চর্যাগীতি থেকে। সে গীতি অবশ্য বহুকাল আগেই ধ্রপদ, পদাবলীকীর্তন, শক্তিগীতি, টপ্পা, ঠুংরী সব পেরিয়ে এসেছে। তবে এদেশে দেশাত্মবোধক গানের সূচনা ঘটে ঊনিশ শতকের প্রথম ভাগে, ঈশ্বর গুপ্ত ও তার অনুসারীদের হাত ধরে। পরবর্তী সময়ে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে শুরু করে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন এবং সবশেষে বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবাদী মানসিকতা ও স্বজাত্যবোধ সৃষ্টিতে দেশের বন্দনা ও দেশপ্রেমের কথায় তৈরি হতে থাকে একেকটি দেশাত্মবোধক গান।  

আমি বিজয় দেখেছি - এম আর আখতার মুকুল
মূলধারা ’৭১ (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস) - মঈদুল হাসান

গণসঙ্গীত: 

বেশিরভাগ দেশে মানুষের পরাধীনতার বেদনা, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও সংগ্রাম, অধিকার আদায়, মাতৃভাষা রক্ষায় আন্দোলন এসবই গণ জাগরণের মূল বিষয় ছিল। আর এই বিপুল গণজাগরণের হাতিয়ার ছিল একেকটি অদম্য গণসঙ্গীত। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় গণনাট্যসংঘ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সূচনা ঘটে এ সঙ্গীতের। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসঙ্গীত, রাবীন্দ্রিক ও পাশ্চাত্য সুরধারাকে গণসঙ্গীতে ব্যবহার করা হয়। সে সময় বিদ্রোহী গান ও রণ সঙ্গীতের মাধ্যমে আরেকটি নতুন শাখা যুক্ত করেছিলেন আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যেখানে প্রতিবাদের অভয় বাণী ছিল স্পষ্ট। 

জোছনা ও জননীর গল্প (মুক্তিযুদ্ধনির্ভর ঐতিহাসিক উপন্যাস) - হুমায়ূন আহমেদ
একাত্তরের দিনগুলি - জাহানারা ইমাম

কিছু বাংলা দেশাত্মবোধক গান:

“আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রচনা করেছিলেন। কলকাতায় টাউন হলে প্রথম গানটি গাওয়া হয়েছিল। পরে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় দেশাত্মবোধক এই গানটিকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  

“আমি যে দেখেছি সেই দেশ, উজ্জ্বল সূর্য-রঙিন” গানের রচনা ও সুর করেছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। বাংলার গণসঙ্গীতে যার অবদান অন্যতম। সে সময় কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা আন্দোলন ও তেলেঙ্গানা আন্দোলন নিয়ে জনপ্রিয় কিছু গান রচনা করেন। যার কারণে তাকে কারাবন্দি হতে হয়েছিল কয়েকবার।

দেয়াল - হুমায়ূন আহমেদ
নিষিদ্ধ লোবান (মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস) - সৈয়দ শামসুল হক

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” দু’ লাইনে যেন অনেক কথা বলে দেয় গানটি। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে যখন ছাত্রদের গায়ে গুলি চলে তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র আব্দুল গাফফার চৌধুরী মেডিকেলে যান ছাত্রদের অবস্থা জানতে। সে সময় সংগ্রামী রফিকের লাশ দেখে তার মাথায় প্রথম দুটি লাইন জেগে ওঠে। পরে পুরো গানটির সুর করেন আলতাফ মাহমুদ। যিনি শহীদ হন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। সবমিলিয়ে একুশের এই গানটির পেছনে রয়েছে অনেক ত্যাগের কাহিনী। 

রাইফেল রোটি আওরাত (রচনাকাল ১৯৭১ এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত)-আনোয়ার পাশা
মা (মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস) - আনিসুল হক

এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক সময়ে অতুল প্রসাদ সেন এর একটি জনপ্রিয় গান ছিল “মোদের গরব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা”। আর “ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা” দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের এ গানটির কথা আমরা কে না গেয়ে এসেছি ছেলেবেলা থেকে। আরও কতশত জনপ্রিয় দেশের গান আছে তার ইয়ত্তা নেই।

এবার ফিরে আসি সেই প্রশ্নে। কেন দেশাত্মবোধক গান? যদিও এতক্ষণে সে প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবার কথা। তবে মোটকথা দেশের প্রতি সত্যিকার টান অনুভব করতে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা যোগায় এসব গান। “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি” অথবা “তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পারি দেবো রে” গানের সাথে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন অনেকেই আছেন যারা নির্দিধায় প্রাণ উজার করে দিয়েছেন দেশের জন্য। এখানেই তো স্বার্থকতা দেশাত্মবোধক গানের... 

আগুনের পরশমণি - হুমায়ূন আহমেদ
বাংলাদেশ : রক্তের ঋণ (বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দলিল) - মোহাম্মদ শাহজাহান, অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস

এগারোটি সেক্টরের বিজয় কাহিনী - মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045909881591797