আইইডিসিআরের কীটতত্ত্ব জরিপদেশে এডিসের ২ প্রজাতি ছাড়াও ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকার বাইরে দেশের তিনটি অঞ্চলে ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস এলবোপিক্টাস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। চলতি বছর সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি আইইডিসিআরের একটি গবেষক দল বরিশাল, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলায় কীটতত্ত্ব জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালী আইইডিসিআর মিলনায়তনে আইইডিসিআর ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক কর্মশালায় এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরিশাল ও কুষ্টিয়ায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস এলবোপিক্টাস মশা পাওয়া গেলেও এজিপ্ট মশার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে মেহেরপুরে এলবোপিক্টাস ও এজিপ্ট দুই প্রজাতির এডিস মশারই অস্তিত্ব মিলেছে। সে হিসেবে তিন অঞ্চলেই এলবোপিক্টাস মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব অঞ্চলে এডিসের অন্য প্রজাতির কামড়েও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

তবে এডিসের কোন প্রজাতির মশার কামড়ে তারা আক্রান্ত হয়েছেন তা এখনও খুঁজে পাননি গবেষকরা। বাংলাদেশে এডিসের দুটি প্রজাতি এজিপ্ট ও এলবোপিক্টাসের অস্তিত্ব আছে। এদের মধ্যে এজিপ্ট শহরে এবং এলবোপিক্টাস গ্রামে থাকে। এবার এ দুই প্রজাতির বাইরেও এডিসের অন্য প্রজাতির মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশালে ঘর-গৃহস্থালির ওপর পরিচালিত জরিপে ২৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে ১৫ জনের শরীরে জ্বর পাওয়া যায়। জ্বর আক্রান্তদের মধ্যে চারজনের মধ্যে ওমগ নেগেটিভ ও ১১ জনের মধ্যে ওমগ পজিটিভ পাওয়া যায়। এ ছাড়া অতীতে ডেঙ্গুর ইতিহাস জানতে ২৩১ জনের ওমএ পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১৭১ জনের ওমএ নেগেটিভ ও ৬০ জনের ওমএ পজিটিভ পাওয়া যায়।

জরিপে বলা হয়, এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশার কামড়ে সাতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৪ জন এডিসের অন্য প্রজাতির মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছে গবেষক দল। তবে এডিসের কোন প্রজাতির মশার কামড়ে তারা আক্রান্ত হয়েছেন, তা নিয়ে আইইডিসিআর গবেষণা করবে।

কুষ্টিয়ার চাটারপাড়া এলাকায় ৭১টি ঘরবাড়ির ও এর আশপাশে জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, চাটারপাড়া এলাকায় ৩১ জনের মধ্যে ২৯ জনের ঘঝ১ পজিটিভ এবং দু'জনের ওমগ পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ এলাকায় ২১ জনের মধ্যে ১৪ জন এডিস এলবোপিক্টাস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ অঞ্চলে এজিপ্ট মশার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

মেহেরপুরের গাংনী এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। জরিপে ২৩৭ এডাল্ট মশা শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১১৬টি এডিস প্রজাতির বিভিন্ন মশা পাওয়া যায়। এই ১১৬টির মধ্যে ৭৮টি এডিস এলবোপিক্টাস এবং চারটি এডিস এজিপ্ট প্রজাতির মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটিকে এডিস ফ্লোভাপিক্টাস ডাউন্সি প্রজাতির মশার বলে ধারণা করছে আইইডিসিআরের গবেষক দল।

এডিস মশার দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি এডিস এজিপ্ট এবং অপরটি এডিস এলবোপিক্টাস। এদের মধ্যে এজিপ্ট প্রজাতি শহরে ও এলবোপিক্টাস গ্রামে থাকে। ঢাকার বাইরে তিন অঞ্চলে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে সব অঞ্চলেই এলবোপিক্টাস মশার অস্তিত্ব মিলেছে। তবে মেহেরপুরে দুই প্রজাতির মশারই অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আক্রান্ত অনেকে এডিসের কোন প্রজাতির মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছে, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।

এ নিয়ে আইইডিসিআর গবেষণা করবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, অনেকে এজিপ্ট ও এলবোপিক্টাস কোনোটিরই কামড়ে আক্রান্ত হননি। তারা অন্য প্রজাতির মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে অধিকতর গবেষণা করা হবে। এরপরই জানা যাবে, এসব ব্যক্তি কোন প্রজাতির মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গু যে প্রকোপ নিয়ে এসেছে, আগেভাগে আমাদের কারও ধারণা ছিল না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে ডেঙ্গু প্রকোপ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গুজনিত কারণে .০০২ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহির্বিভাগ ও বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা হিসাবে আনলে এই সংখ্যা আরও কম হবে। তবে একটি মৃত্যুও কাম্য নয়। ডেঙ্গু মোকাবেলায় বছরজুড়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। আশা করি, আগামী বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক কমে আসবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানখিন, শিশির মোড়ল, নুরুল ইসলাম হাসিব, মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল, জান্নাতুল বাকীয়া কেকাসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037550926208496