দেশেই করোনার পরীক্ষামূলক ওষুধ তৈরি হচ্ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কোভিড-১৯) এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো ওষুধ নেই। তবে থেমে নেই চিকিৎসক ও গবেষকেরা। ধনী-গরিব সব দেশ হন্যে হয়ে করোনার ওষুধ খুঁজছে। নিরন্তর গবেষণা হচ্ছে কার্যকর ওষুধ তৈরির জন্য। পরীক্ষামূলক ওষুধ তৈরিও হচ্ছে।

এ থেকে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোও। এদের মধ্যে আছে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, জিসকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস প্রভৃতি। ঔষধ প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় যেসব ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেসব ওষুধই তৈরি করছে দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো। জানা গেছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বেশ কয়েকটি ওষুধ তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল গাইডলাইন ফর কোভিড-১৯ বেশ কিছু ওষুধ তাদের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

করোনাভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় একাধিক ওষুধ নিয়ে কাজ করছে দেশের প্রতিষ্ঠিত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস। এ ব্যাপারে এসকেএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন বলেন, ‘দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে আমাদের জনগণের জন্য কার্যকরী ওষুধ সরবরাহ রাখতে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিন এবং বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করে আসছি। ইতিমধ্যে আমরা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রস্তুত করেছি। অতিসত্বর আমরা ফ্যাভিপিরাভির, ওসেল্টামিভির ও ইভারমেকটিন প্রস্তুত করতে যাচ্ছি। আমরা চাই, উন্নত বিশ্বে যেসব ওষুধ কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হবে, তার সব কটি এ দেশের মানুষের জন্য এসকেএফ প্রস্তুত করবে।’

জানা গেছে, ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটি জাপানি কোম্পানি ফুজির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তোয়ামা কেমিক্যাল তৈরি করেছিল ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য। গত শনিবার ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফল বায়োটেকনোলজি ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ঝ্যাং জিনমিন বলেছেন, দেশটির দুটি মেডিকেল ইনস্টিটিউশন ফ্যাভিপিরাভির প্রয়োগ করে দেখেছে, এটি করোনাভাইরাসজনিত কিছু লক্ষণ কমাতে কার্যকর। এর মধ্যে রয়েছে নিউমোনিয়া। ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ লিখেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার খাদ্য ও নিরাপদ ওষুধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ফ্যাভিপিরাভিরের বদলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির তৈরি রেমডেসিভির নামের একটি ওষুধ করোনা চিকিৎসায় পরীক্ষামূলক ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এটি ইবোলা ভাইরাস চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি জাইলিড সায়েন্স। জাপানে ফুজির তৈরি ফ্যাভিপিরাভির ওষুধটির ব্র্যান্ড নাম অ্যাভিগান। এটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করতে পারে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে জাপান।

ফ্যাভিপিরাভির তৈরি করেছে  বিকন ফার্মা। ক্যানসারের ওষুধ তৈরির জন্য সুপরিচিত বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম বলেন, ‘কার্যকারিতা পাওয়া গেলে ওষুধটির বাণিজ্যিক উৎপাদন করা যাবে। ওষুধটি মূলত ইবোলা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য জাপানের ফুজি তৈরি করেছিল। পরে চীন করোনা ঠেকাতে এটি প্রয়োগ করে সুফল পায়। তাই আমরা চীন থেকে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) এনেছি।’

বেক্সিমকো ফার্মাও বলছে, তারাও ওষুধ তৈরি করে মজুত রাখছে, যাতে সরকার চাইলে সরবরাহ করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাব্বুর রেজা বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ওষুধ পরীক্ষা করছে। আমরা রেমডেসিভির বাদে সবগুলোই তৈরি করে মজুত করছি যাতে যেকোনো একটি কার্যকর প্রমাণিত হলে এবং অনুমোদন দেওয়া হলে আমরা সরকারকে সরবরাহ করতে পারি।’

করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে বড় দেশগুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট দেশও কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ গত শনিবার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও ডোহার্টি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, আইভারমেকটিন শরীরে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পারে। যদিও বিষয়টি একেবারেই পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।

করোনার সম্ভাব্য ওষুধ তৈরির বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংস্থাটির সাবেক পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নতুন কোনো ওষুধের অনুমোদন দেয়। দেশে কোনো ওষুধ বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে হলে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তবে সুবিধার দিক হচ্ছে, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধের মেধাস্বত্ব কেনা ছাড়াই ওষুধ তৈরি করতে পারে।

সূত্র: প্রথমআলো


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057120323181152