বিসিএস ক্যাডারে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সদস্য শিক্ষা ক্যাডারে। প্রায় ১৬ হাজার সদস্যদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। কিন্তু গত দেড় বছর আগে সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না। যা এই ক্যাডারের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে কতিপয় নেতা ঠিকই পদবি ব্যবহার করে সুবিধা আদায় করছেন। এতে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অতীতে এত দীর্ঘ সময় নির্বাচনবিহীন অবস্থায় থাকেনি বিসিএস শিক্ষা সমিতি। মূলত সমিতির একজন সদ্য সাবেক মহাসচিব নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে টালবাহানা করছেন। তিনি শিক্ষা প্রশাসনেও একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। অন্যদিকে তিনি অবৈধভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ সমিতির সদস্য সচিবের পদবি ব্যবহার করে শিক্ষা প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন। দ্বিবার্ষিক এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন। এরপর কোনো নির্বাচন ছাড়াই দিন পার করছে সমিতি।
সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সর্বোচ্চ দুই মাস করে দুই বার আহ্বায়ক কমিটি করা যাবে। তবে ওই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন শেষ করতে হবে। কিন্তু সর্বশেষ কমিটি নিয়মানুযায়ী কোনো আহ্বায়ক কমিটিই গঠন করেনি। তবে নির্দিষ্ট সময় পরে কতিপয় নেতা একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন; যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। নিয়মানুযায়ী আহ্বায়ক কমিটির অস্তিত্ব না থাকলেও কয়েকজন নেতা ঠিকই পদবি ব্যবহার করছেন।
সূত্র জানায়, গত ১৯ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ‘এসডিজি ৪ এবং সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অভীষ্ট ও লক্ষ্যসমূহ অর্জনে শিক্ষা ক্যাডারের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি, সিরাজগঞ্জ জেলা ইউনিট। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। তার পদবিতে লেখা হয়—পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সদস্য সচিব বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি।
শিক্ষা ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এখন কারো সদস্য সচিব থাকার সুযোগ নেই। তাহলে শাহেদুল খবির কীভাবে এই পদবি ব্যবহার করছেন? একে তো তিনি পরিচালক তারপর সমিতির পদবি ব্যবহার করে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।
জানা যায়, সাবেক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সহসভাপতি মো. মুজাহিদ বিল্লা ফারুকী, সেমিনার সচিব ড. মো. কুদ্দুস সিকদারসহ চার-পাঁচ জন দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগও করেছেন। এমনকি শিক্ষা ক্যাডারের অভিভাবক হিসেবে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের কাছে সমিতির সাবেক নেতারা দেখা করছেন। একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিলেও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার চাপে মহাপরিচালক তা পারেননি।
ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও সাবেক সেমিনার সচিব ড. মো. কুদ্দুস সিকদার বলেন, এত দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়া বিসিএস শিক্ষা সমিতির ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এতে সমিতির প্রতি সাধারণ সদস্যদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষা ক্যাডারকেও চরম সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সংসদের সদস্য সচিব সৈয়দ জাফর আলী বলেন, সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত হলেও একটি বিশেষ গোষ্ঠী তা কোনোভাবেই হতে দিচ্ছে না। এতে শিক্ষা ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার সমাধান জরুরি।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ কমিটির সাবেক সভাপতি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, নির্বাচন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সমিতির কিছু নেতারা এই নির্বাচন আটকে রেখেছেন। যা গণতান্ত্রিক নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থি। এতে সমিতির প্রতিনিধিত্ব করা যাচ্ছে না। আমরা ব্যাপারটি শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন।