১৫ ও ২১ আগস্টের নির্মম হত্যাকান্ডকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ জ্ঞান করা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে ওএসডি করা হচ্ছে। প্রথমে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও্এসডি) ও পরে তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হবে জাহাঙ্গীরকে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম ফারুক বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাকে (মহাপরিচালককে) জানিয়েছেন প্রথমে ওএসডি ও পরে তদন্ত কমিটি করে বরখাস্ত করা হবে। দৈনিক শিক্ষাডটকমে ২১ আগস্ট প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদটি আমিসহ শিক্ষা প্রশাসনের ঊধর্বতন সবাই দেখেছেন।’
পরিচালক জাহাঙ্গীরের মন্তব্যের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা-কর্মী, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা। তারা জাহাঙ্গীরের বরখাস্তসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
তার এই নেতিবাচক মন্তব্যে শিক্ষাভবনেও তোলপাড় শুরু হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা এঘটনার প্রতিবাদ জানাতে তার অফিস কক্ষেও ঢুকে যান। টের পেয়ে এর আগেই ড. জাহাঙ্গীর অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
এরকম পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ করেন। সবশুনে শিক্ষামন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানান মহাপরিচালক।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ড. জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওএসডি করা হতে পারে। আর এমন খবর পেয়েই ড. জাহাঙ্গীর ওএসডির আদেশ ঠেকাতে বিভিন্ন মহলে ছোটাছুটি করছেন। তবে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, সেই বক্তব্যটি ছিল ‘স্লিপ অব টাং। আমি আসলে এমনভাবে বলতে চাইনি। আমি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে চেয়েছিলাম।
এদিকে, ড. জাহাঙ্গীরের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখ। গতকাল একসভায় সমিতির নেতারা বলেন- ১৫ ও ২১ আগস্ট বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে দু’টি কলঙ্কজনক অধ্যায় ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। শোকাবহ এ দিন দু’টিতে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা যখন নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশসহ রুহের মাগফেরাত কমনায় ব্যস্ত তখন দায়িত্বশীল পদে থেকে বেদনাদায়ক ঘটনা দুটিকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ বলে পরিহাস করা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই এহেন বক্তব্যে সারাদেশের শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। নেতারা মনে করেন- প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনও ‘শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থবিরোধী কর্মকান্ডে’ লিপ্ত রয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে ১৫ ও ২১ আগস্টের ঘটনার মতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও জনমনে হালকা করে তুলবেন এবং জাতিকে পিছিয়ে নেবার জন্য কুটকৌশলে লিপ্ত হবেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক মশিউর রহমান সুমন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ ও যুবলীগ নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদসহ শতাধিক নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে তার কক্ষে যান। তাকে না পেয়ে অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে তাদের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের কথা জানান। আগামী রোববার ফের তারা জাহাঙ্গীরকে খুঁজতে যাবেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা রোকেয়া কবীর ড. জাহাঙ্গীরের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। উল্লেখ্য, ওই দিনের আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন রোকেয়া কবীর।
পরিচালক ড. জাহাঙ্গীরের মূল পদ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের শিক্ষক। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি যথাক্রমে এই অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও পরিচালক পদে আছেন। তার নিজ জেলা কুমিল্লা।