জাল সনদে এমপিওভুক্ত হওয়ার অভিযোগে নীলফামারীর ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আফিউল ইসলামের এমপিও বাতিল করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তার বিরুদ্ধে দৈনিক শিক্ষায় ‘টাকার বিনিময়ে জাল সনদে এমপিওভুক্তির অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রভাষক আফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রংপুর অঞ্চল।
দৈনিক শিক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রভাষক আফিউল ইসলামের এমপিওভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন। জাল কাগজে সুপারিশের ভিত্তিতে প্রভাষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়ে গত আগস্টের ৮ তারিখে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন আফিউল ইসলাম।
আফিউল ইসলাম নীলফামারীর ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের আইসিটি প্রভাষক পদে জাল নিবন্ধন পত্রে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন। একই বছরের ৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসিম হায়দার অপু এমপিওভুক্তির জন্য পত্র পাঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। কিন্তু কয়েক দফা অনলাইনে আবেদন পাঠানোর পরেও আবেদন বাতিল করা হয়েছিল। প্রভাষক আফিউল ইসলামের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে যে নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করা হয়েছে সেটির রোল নং- ৪২৭১০০৭৪, রেজি নং-৯০০০৭২৩১/২০০৯ (কম্পিউটার সাইন্স), যা অনলাইনে প্রদর্শন করে না। অভিযোগ আসে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগটি বৈধ করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসিম হায়দার অপু ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল হালিম।
এ ব্যাপারে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের আইসিটি প্রভাষক আফিউল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছিলেন, নিবন্ধন সঠিক রয়েছে, আগুন লেগে কম্পিউটারের কিছু ডকুমেন্ট নষ্ট হওয়ায় আমার নিবন্ধনটি অনলাইনে শো করছে না।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল অবকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১৮ নম্বর গ এবং ঙ কলামে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, মিথ্যা তথ্য প্রদান, অবৈধ শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়া শাখা খোলা অথবা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর বা বোর্ডের আপিল ও আরবিট্রেশনের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন না করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতন ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে। এছাড়া এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে জাল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অথবা নিবন্ধন সনদ প্রদান, জাল নিয়োগ সংক্রান্ত রেকর্ড প্রদান মহিলা কোটা অনুসরণ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ এবং প্যাটার্ন বহি র্ভূত পদে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন পাঠালে প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতা স্থগিত বা বাতিল করা হবে বলেও উল্লেখ রয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের কার্যালয় থেকে ডিমলা ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রভাষক আফিউল ইসলামের এমপিও বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, কম্পিউটার বিষয়ের প্রভাষক নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং কম্পিউটার বিষয়ে নিবন্ধনধারীরা কম্পিউটার বিষয়ে প্রভাষক হিসাবে এমপিওভুক্তি হতে পারবেন। প্রভাষক আফিউল ইসলামের নিবন্ধন সনদটি ত্রুটিপূর্ণ। তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স এবং মাষ্টার্স ডিগ্রীধারী। তাই প্রভাষক আফিউল ইসলামের এমপিও বাতিল করা আবশ্যক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এ বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠান প্রধান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন ছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চল থেকে প্রভাষক আফিউল ইসলামের বেতন উত্তোলন না করে এমপিও শিট হতে কর্তনের আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয় কলেজটির অধ্যক্ষ হাসিম হায়দার অপুকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করেন অধ্যক্ষ। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সত্যতা যাচাই করে প্রভাষক আফিউল ইসলামের এমপিও বাতিল করেন।