দ্বাদশ শ্রেণিতে অটো প্রমোশন : ভোরের কাগজ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য |

করোনার জেরে পঠন-পাঠন তছনছ হয়ে যাওয়ায় দ্বাদশ শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দিচ্ছে সারাদেশের কলেজগুলো। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, বছরের মধ্য এপ্রিল থেকে মে মাসে প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এবার করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলেজগুলোতে প্রথম বর্ষ সমাপনী পরীক্ষা হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘প্রমোটেড’ দেখানো হয়েছে। এদিকে করোনার কারণেই দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম চিকিৎসা শাস্ত্রের মর্যাদাপূর্ণ ‘এফসিপিএস’ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি  লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। 

একাধিক কলেজ শিক্ষক ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষাপঞ্জি মেনে একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণের জন্য পরীক্ষা নেয়া হতো। এবার করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা হয়নি। এর ফলে অটো প্রমোশন দিয়ে শিক্ষাবর্ষ বহাল রাখা হচ্ছে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক এই অটো প্রমোশনের পক্ষে নন। তারা মনে করেন, ‘নামকাওয়াস্তে’ হলেও পরীক্ষাটি নেয়া প্রয়োজন ছিল।

এর আগে প্রাথমিকের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা, মাধ্যমিক স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা কবে হবে সেটির দিনক্ষণ এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষা বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ বলেছেন, অটো প্রমোশন দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ ঠিক রাখা হোক। কেউ বলেছেন, সিলেবাস ছোট করে পরীক্ষা নেয়া হোক। আবার কেউ বলেছেন, শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে পুরো সিলেবাস পড়িয়ে তবেই পরীক্ষা নেয়া হোক। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কিছু বলছে না। এরই মধ্যে কলেজগুলোতে একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে ‘অটো প্রমোশন’ দেয়া শুরু হয়েছে। করোনার কারণে এই শ্রেণিতেই প্রথম অটো প্রমোশন দেয়া হলো।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকই হচ্ছে ‘ফরমাল’ পরীক্ষা। এর বাইরে যে পরীক্ষা হয় সেগুলো অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা। সেসব পরীক্ষা কীভাবে হবে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপরই নির্ভর করে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, এটাকে ‘অটো প্রমোশন’ বলা যাবে না। বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে মূল্যায়ন করেই দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। এই মূল্যায়ন কিংবা প্রমোশনে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে গেলেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জের বাহুবলের আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রভাষক আইয়ুব আলী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, পরীক্ষা না নিলে মূল্যায়ন হবে কী করে? করোনার কারণে গত তিন মাস কলেজ বন্ধ। এ অবস্থায় দ্বাদশ শ্রেণিতে প্রমোশন পাওয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা আয়ত্তে আনতে কষ্ট হবে। তার মতে, অটো প্রমোশনের আগে ‘নামকাওয়াস্তে’ একটা পরীক্ষা নেয়ার দরকার ছিল। তাতে শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে যা পড়েছে তার পর্যালোচনা করা যেত। এরপর দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা থাকত। কিন্তু প্রকৃতির কাছে সবাই অসহায়।

এদিকে, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশের মেডিকেল বিষয়ক উচ্চতর ডিগ্রি এফসিপিএসের জুলাই ২০২০ সেশনের পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) কাউন্সিলরদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিসিপিএসের অনারারি সচিব অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম মেডিভয়েস।

খবরে বলা হয়, বিসিপিএস কাউন্সিলের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পরীক্ষা এখন হবে না। ফলে জুলাই সেশনের সব পরীক্ষা (এফসিপিএস ১ম পর্ব, এফসিপিএস ২য় পর্ব (শেষ পর্ব), প্রিলিমিনারি এফসিপিএস ২য় পর্ব, এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) এবং এমসিপিএস) স্থগিত করা হয়। এতে ৪৮ বছরের ইতিহাসে এফসিপিএস পরীক্ষা প্রথমবারের মতো স্থগিতের ঘটনা ঘটল।

পরীক্ষা সংক্রান্ত যেসব নিয়ম আগে ছিল, এগুলো বহাল থাকবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা একই রেজিস্ট্রেশন দিয়ে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। এছাড়াও এই সেশনের পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা পরীক্ষার্থীরা, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইলে কলেজের নিয়মানুযায়ী তা করতে পারবেন। এফসিপিএস (সাব-স্পেশালিটি) পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে থিসিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, পরবর্তী পরীক্ষার জন্য তার বৈধতা থাকবে।

এ সেশনের পরীক্ষা কবে নেয়ার চিন্তা করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জানুয়ারির আগে পরীক্ষা হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হলেও মিড টার্ম কোনো পরীক্ষা হবে না। এখন আমরা যদি বলি, জানুয়ারিতে পরীক্ষা নেব দেখা গেল, ওই সময়ে পরিস্থিতি এরচেয়েও খারাপ হয়ে গেল। তখন যদি পরীক্ষা নেয়া না যায়, তাহলে তো আবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আইনগতভাবে আমরা পরীক্ষার বাতিল করতে পারব না। কারণ আমরা পরীক্ষার ফি নিয়েছি। তাই বাতিল করিনি, স্থগিত করেছি।

ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে এফসিপিএস পরীক্ষা স্থগিত করায় বিসিপিএসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তারা বলেন, এমন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সারা বিশ্বেই ডাক্তারদের পোস্টগ্রাজুয়েশন পরীক্ষাগুলো পেছানো হচ্ছে। প্রতিক‚ল এই মহামারির সময়ে বিসিপিএসের এ সিদ্ধান্ত সত্যিই প্রশংসনীয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ ৮৬৬ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদায়ন - dainik shiksha ৮৬৬ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদায়ন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মামুন - dainik shiksha কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা মামুন মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস অনলাইনে - dainik shiksha মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নতুন করে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha নতুন করে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি বুয়েটের বিতর্কিত ‘সাংবাদিক সমিতি’র কমিটি বিলুপ্ত! - dainik shiksha বুয়েটের বিতর্কিত ‘সাংবাদিক সমিতি’র কমিটি বিলুপ্ত! আলিমের ফরম পূরণের সময় বাড়লো - dainik shiksha আলিমের ফরম পূরণের সময় বাড়লো কৃষি গুচ্ছের ভর্তি আবেদন শুরু - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের ভর্তি আবেদন শুরু এমপিও শিক্ষকরাও সর্বজনীন পেনশনে - dainik shiksha এমপিও শিক্ষকরাও সর্বজনীন পেনশনে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058400630950928