ধরাছোঁয়ার বাইরে সম্রাট ও খালেদের 'ক্যাশিয়ার' মাকসুদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ক্যাসিনো-জুয়ার কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ সবকিছুতেই জড়িত ছিলেন মাকসুদ। গ্রেফতার যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার 'ক্যাশিয়ার' হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে তার ক্ষমতার দাপট ছিল সবখানে। এ সুযোগে অবৈধ পথে তিনি কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক এই নেতার পুরো নাম মাকসুদুর রহমান। চলমান শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের কয়েক নেতা গ্রেফতারের পর তার নামও ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। তবে তিনি এখনও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের শুরুতেই গত ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ নেতা (পরে বহিস্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাকসুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। তখন থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাকসুদের অপকর্ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে। এর পরই দলীয় কার্যালয় ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন তিনি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ক্যাসিনো কারবারে জড়িত যুবলীগ নেতাদের মধ্যে মাকসুদুর রহমানের নামও রয়েছে। সম্রাট ও খালেদের ঘনিষ্ঠ এই সহযোগীকে গ্রেফতার করা গেলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি 'সুপার ইম্পোজে'র মাধ্যমে নিজের পোস্টারে ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে পোস্টার ছাপান মাকসুদ। সেই পোস্টার লাগানো হয় ঢাকার অলিগলিসহ তার গ্রামের বাড়ি ভোলার বিভিন্ন এলাকায়। পরে তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রধানমন্ত্রীকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়। এর পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়। অবশ্য বিভিন্ন নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে তিনি এই বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করেন।

নেতাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির এন্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যুবলীগের একাধিক শীর্ষ নেতার বিশেষ অনুগত ছিলেন তিনি। তাদের নির্দেশে নানা অপকর্ম করেছেন। ফলে তাকে পাওয়া গেলে ওই নেতাদের অপকর্মের ব্যাপারেও অনেক তথ্য মিলবে বলে পুলিশের ধারণা।

একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিলের বিভিন্ন ক্লাব থেকে প্রতি রাতে নির্ধারিত হারে টাকা তুলতেন মাকসুদ। এর পর সেসব টাকা তিনি পৌঁছে দিতেন যুবলীগের এক শীর্ষ নেতার কাছে। প্রতিরাতে অন্তত এক লাখ টাকা পেতেন সেই নেতা। আবার কোনো রাতে পেতেন ১০ লাখের বেশি। এভাবে কয়েক বছরে মাকসুদ কোটি কোটি টাকা

তুলেছেন ক্যাসিনো-জুয়া পরিচালনাকারী ক্লাবগুলো থেকে। পাশাপাশি যুবলীগ নেতা সম্রাটের পক্ষে মতিঝিল এলাকায় চাঁদাবাজিও করতেন। এই চাঁদার একটি বড় অংশ আসত বিদেশে লোক পাঠানোর নামে মানব পাচারে জড়িত চক্রের হোতাদের কাছ থেকে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি 'কমিশন' আদায় করতেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজও ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। নেতাদের ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করার সুবাদে তিনি নিজেও কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। মতিঝিল ও পুরান ঢাকায় রয়েছে তার তিনটি ফ্ল্যাট।

ছাত্রাবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন মাকসুদ। পুরো সময় কমিটিতে কোনো পদ না থাকলেও রিপন-রোটন কমিটির সম্মেলনের আগে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক করা হয়। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা না থাকলেও পরে তিনি যুবলীগে যোগ দেন। বাগিয়ে নেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। তার বিরুদ্ধে রমনা টেনিস ক্লাব ও ইস্কাটন এলাকায় দুই ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যাচেষ্টায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক রাজীব হত্যাকাণ্ডেও তার নাম আসে।

এদিকে, মাকসুদুর রহমান বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, 'ক্যাসিনো কারবার, জুয়া, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা মাদক ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।' গ্রেফতারকৃত খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার আপন ছোট ভাই মাকসুদুর রহমান মাকসুদ বলেন, 'রিমান্ডে হয়তো তার কথাই বলেছেন খালেদ। কিন্তু গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।' তিনি স্বীকার করেন,' প্রধানমন্ত্রীর ছবি 'সুপার ইম্পোজ' করার বিষয়টি সত্য। এটা মারাত্মক ভুল ছিল।' সেই ভুল স্বীকার করে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে মাকসুদ বলেন, 'প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার আমি।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003734827041626