আটকের কয়েকঘন্টা পর মুচলেকায় ছাড়া পেলেন সাবেক ভিপি নূর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

সোমবার রাতে তাকে আটকের কয়েকঘন্টার মধ্যেই মুচলেকায় থানা থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। ধর্ষণ মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় পুলিশ তাকে আটক করেছিল।

তবে তাকে আটকের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনায় নুরসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

রোববার রাতে নুর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং ধর্ষণকারীকে সহযোগিতা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। রাজধানীর লালবাগ থানায় ওই মামলা করা হয়। মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী।

নুর ও মামুন ছাড়াও ওই মামলায় অপর আসামিরা হলেন- ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সহসভাপতি নাজমুল হুদা এবং ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হিল বাকি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা জানিয়েছেন, রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে থেকে পুলিশ নুরুল হক নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের আরও কয়েকজন নেতাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে, মামলার এজাহারে বাদী নিজেকে প্রধান আসামি মামুনের বান্ধবী পরিচয় দিয়েছেন। তার অভিযোগ, হাসান আল মামুন তার একই বিভাগের সিনিয়র ছাত্র এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয়। তারা মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তার সঙ্গে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে মামুন তাকে লালবাগের বাসায় ডেকে নেয়। তিনি বাসায় গেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মামুন তাকে ধর্ষণ করে।

সাবেক ভিপি নুরসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে বাদী এজাহারে বলেছেন, ঘটনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১২ জানুয়ারি তাকে মামুন তার বন্ধু (২ নম্বর আসামি) সোহাগের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তখন তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সোহাগ বাধা দেয়। একপর্যায়ে তিনি যাতে হাসপাতালে থাকতে না পারেন, সে জন্য নানা অপচেষ্টা চালান। এর মধ্যে তিনি এক নম্বর আসামি মামুনকে বিয়ের চাপ দিলে সে বিয়ে করতে সম্মত হলেও পরে টালবাহানা শুরু করে।

বাদী বলেন, কোনো উপায় না দেখে গত ২০ জুন বিষয়টি নুরুল হক নুরকে (৩ নম্বর আসামি) মৌখিকভাবে জানালে তিনি বিষয়টির সুরাহা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। নুর তাকে নীলক্ষেতে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে মীমাংসার কথা এড়িয়ে তাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে হুমকি দেন। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে নুর তার ভক্তদের দিয়ে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়াবেন বলেও হুমকি দেন। তাকে (বাদীকে) পতিতা বলে ছাত্র অধিকার পরিষদের লাখ লাখ মেম্বারের গ্রুপে প্রচার চালানোরও হুমকি দেন। তার একটি লাইভে সব সম্মান চলে যাবে বলেও তাকে শাসান। মামলার ৪ নম্বর আসামি সাইফুল তার (বাদী) নামে কুৎসা রটাতে ৫ নম্বর আসামি নাজমুল ও ৬ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ হিল বাকিকে দায়িত্ব দেয়। তারা মেসেঞ্জার গ্রুপে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকে।

মামলার এজাহারে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে অভিযোগকারী ছাত্রী বলেন, পুরো ঘটনাটি ছাত্র অধিকার পরিষদের অনেকেই জানেন। অনেকেই মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বললেও তাকে ঘোরানো হচ্ছিল। মামুনও তাকে বিয়ের আশ্বাসে ঘুরাচ্ছিল। এ জন্যই তিনি বাধ্য হয়ে দেরিতে হলেও আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাসান আল মামুনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, এতে সহায়তা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029349327087402