সার্ভার জটিলতা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির মধ্যে সমন্বয়হীনতায় সঙ্কটে পড়েছে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর টাকা দেয়ার উদ্যোগ। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এক দফা সময় বাড়ালেও আবেদন করতে পারছেন না অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা। আবার করোনার মধ্যে দ্রুত যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভুয়া ও অযোগ্য ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে এমপিওর তালিকায় ঠুকে পড়ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। বলেছেন, এমপিওভুক্তিতে কোন প্রকার ঘুষ-দুর্নীতি-হয়রানি সহ্য করা হবে না। এর আগে করোনার মধ্যেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ, কোড নম্বর দেয়া ও শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদের আগেই বকেয়াসহ এমপিওর টাকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জরুরীভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সভা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। সভার পর গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত তিনটি অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয় নতুন এমপিওভুক্ত ২ হাজার ছয়শ’র বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোড নম্বর দেয়া ও নিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার। মে মাসেই যেন তারা বেতন-ভাতা পান সেটাও বলা হয়।
কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অধীন ইএমআইএস সেলের দুই/তিন জন কর্মকর্তার অদক্ষতা, উদাসীনতা ও অনভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে সফটওয়্যার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ করায় মন্ত্রণালয়ের শুভ উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে বসছে। সারাদেশ থেকে তিনটি অধিদফতরের অধীন শিক্ষকরাই কম-বেশি অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন সার্ভার অচল, ডাউন থাকা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য আবেদন করা যাচ্ছে না। সবচাইতে বেশি অভিযোগ নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের। যেকোন সমস্যার জন্য হটলাইনে দেয়া নম্বরগুলোর বেশিরভাগ কলই কেউ রিসিভ করছেন না। বিশ/ত্রিশ বার কল করার পর রিসিভ করে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন কেউ কেউ। সারাদেশ থেকে তিনদিন ধরে শিক্ষকরা আবেদন করতে না পারার অভিযোগ করছেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে একদিন সময় বৃদ্ধি করলেও কোন ফল হয়নি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, সার্ভার ডাউন তাই আবেদন করতে পারছেন না। তিনদিন ধরে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। প্রথমে চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদন করতে। পরে দোকানে গেছেন। সেখানে গিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলছেন, হার্ডকপি জমা নেয়ার উদ্যোগ নিতে। তাছাড়া ঈদের আগে তারা বেতন-ভাতার টাকা হাতে পাবেন। এখন আবেদন করতে না পারলে পরে বকেয়ার জন্য শিক্ষা অধিদফতরের ইএমআইএস সেলে কর্মকর্তা ও দালালদের ধরতে হবে। তাদের কমিশন না দিয়ে অতীতে কেউ বকেয়া পাননি।
ঢাকার সিংহরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, সার্ভার জটিলতার সমাধান ও ঈদের আগে বেতন-ভাতা পাওয়ার বিষয়ে জরুরী পদক্ষেপ নিতে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সারাদেশের নতুন এমপিওভুক্ত স্কুল শিক্ষকরা।
শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু শিক্ষক আবেদন করতে পারলেও তাদের তথ্য যাচাই করতে আমাদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারব বলে মনে হয় না। কারণ সার্ভার ডাউন পাই অথবা ঘুরছে অথবা ফেইল দেখাচ্ছে।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মোঃ নজরুল ইসলাম রনি ও বাশিসের মহাসচিব মোঃ মেজবাহুল ইসলাম প্রিন্স জানান, নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে এমপিওর আবেদনের শেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। অথচ আবেদন প্রক্রিয়ায় মাউশি সার্ভার অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র: দৈনিক জনকন্ঠ।