নতুন এমপিওভুক্তিতে ভুলের দায় কার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারির আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এমপিওসংক্রান্ত যাচাই কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদের কাছে বারবার জানতে চেয়েছেন, তালিকায় কোনো ভুল কিংবা অসঙ্গতি নেই তো? জবাবে অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদ বলেছেন, না স্যার, নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় কোনো গড়মিল নেই। ফ্যান্টাস্টিক তালিকা হয়েছে। ওটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না স্যার। রোববার (২৭ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

এমন কথোপকথনের পরই গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ২,৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত আদেশ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকাশিত তালিকায় প্রায় অর্ধশত অযোগ্য, অস্তিত্বহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে। ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত, শিক্ষার্থী নেই, পাসের হার নেই, স্কুল ঘর নেই এবং সরকারি হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিও পেয়েছে। এমনকি এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানও নতুন এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পেয়েছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি, ’৭১-এ শান্তি কমিটির নেতা এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাদের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও এমপিও পেয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা যাচাইবাছাইয়ে চরম উদাসীনতা দেখিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রশ্ন উঠেছে, এই ভুলের দায় কার? কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নানা অজুহাত তৈরি করছেন।

এমপিওভুক্তির তালিকায় তুঘলকি কারবার ঘটার পর এখন কী করা হবে- জানতে চাইলে এমপিও যাচাইবাছাই কমিটির প্রধান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জাবেদ আহমেদ গতকাল বলেন, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এমপিওভুক্তির তালিকা পর্যালোচনা করা হয়নি। আজ রবিবার অফিস খুললে একটা কিছু চিন্তা করা হতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রীও আজ দেশে ফিরবেন। এমনও হতে পারে, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্তির জন্য যাচাইবাছাই কমিটির ওপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি অসন্তুষ্ট। এই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ আজ ঘটতে পারে। কারণ বিদেশ থেকে ফিরেই মন্ত্রী সোজা মন্ত্রণালয়ে আসবেন। এমপিওভুক্তির তুঘলকি কারবার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারেন মন্ত্রী। ওই সূত্র আরো জানায়, এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, কোনো যুদ্ধাপরাধী কিংবা যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান যদি যোগ্য হয়েও থাকে তবুও তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এমপিওভুক্ত করবেন না।

কিন্তু এমপিও যাচাইবাছাই কমিটির সদস্যরা শিক্ষামন্ত্রীর এই কথা আমলেই নেননি। নীতিমালার অজুহাত দিয়ে তারা তাদের মতো কাজ করেছেন। যার অসঙ্গতি এখন ধরা পড়ছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বিদেশ থাকায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী আজ রবিবার দেশে ফিরবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাইতে পারেন। প্রয়োজনবোধে নতুন কোনো নির্দেশনাও দিতে পারেন মন্ত্রী।

মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্তির জন্য গত বছরের আগস্টে আবেদন করে নয় হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানকে বুধবার এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়। এরমধ্যে ২০৪টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ বিবেচনায় এমপিও দেয়া হয়েছে। সেই হিসাবে সাত হাজার ১৫টি প্রতিষ্ঠানই অযোগ্য।

নীতিমালা অনুযায়ী চার শর্ত পূরণকারী প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- প্রতিষ্ঠানের বয়স বা স্বীকৃতির মেয়াদ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার। প্রতিটি পয়েন্টে ২৫ করে নম্বর থাকে। কাম্য শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং স্বীকৃতির বয়স পূরণ করলে শতভাগ নম্বর দেয়া হয়। সর্বনিম্ন ৭০ নম্বর পাওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচিত হয়েছে। এবার আবেদন করা প্রায় ৭২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা ও শর্তপূরণ করতে না পারায় এমপিও পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই অনলাইনে তথ্য দিয়েছে। ওসব তথ্য যাচাইয়ের ব্যবস্থা ছিল বলে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু এমপিও তালিকা প্রকাশে দেখা গেছে, তথ্য যাচাই হয়নি। এ কারণে ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত, অস্তিত্বহীন এবং জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানও এমপিও পেয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00313401222229