নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি: জুনের আগে বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা কম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শামুকের গতিতে চলছে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কাজ। প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে ২ হাজার ৭৩৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। গেজেটও প্রকাশ করা হয়। অসত্য তথ্য দিয়ে কেউ এমপিওভুক্তির আবেদন করছে কি না, তার জন্য নতুন করে যাচাই-বাছাই শুরু হয়। দুনীর্তির ভয়ে যেসব কর্মকর্তা বা দপ্তরকে আগে কাজে লাগানো হয়নি তাদেরকেই দেয়া হয়েছে যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব। আর এই যাচাই চলছে শামুকের গতিতে। কবে সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করা হবে তা এখনো বলতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত সংশোধিত গেজেট প্রকাশের পর শুরু হবে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির কাজ। সেখানেও ব্যয় হবে কয়েক মাস। সে হিসাবে আগামী জুনের আগে শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওর টাকা হাতে পাওয়া এক প্রকার অনিশ্চিত।

এদিকে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম অফিসে টেলিফোন করে জানতে চান কবে সংশোধিত গেজেট জারি হবে আর কবে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা হাতে পাবেন। যদিও বিদায়ী শিক্ষাসচিব মো: সোহরাব হোসাইন ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বছরের ১ জুলাই থেকে বেতন-ভাতা পাবেন। সে হিসেবে এই বকেয়া টাকা হিসেব কষতে সময় নেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। আবার অবসর ও কল্যাণফান্ডে চাঁদা কর্তনের জন্য নতুন  ও বকেয়ার আলাদা হিসেব রয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আগামী জুনের আগে বেতনের টাকা হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশীদ আমিন সাংবাদিকদের বলেন, নতুন শিক্ষকের এমপিওভুক্তির এক বছরের টাকা আমাদের হাতে রয়েছে। আগামী সংশোধিত বাজেটের আগেই এই অর্থ শিক্ষকদের দিতে হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। 

এমপিওভুক্তির ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে সময় বেশি সময় লাগলে ‘বিকল্প’ ভাবা হবে। শিক্ষকরা গত জুলাই মাস থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পাবেন। বর্তমানে যে সফটওয়্যার রয়েছে, তা ব্যবহারের মাধ্যমে বকেয়া বেতন-ভাতা পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে সফটওয়্যারের নতুন তথ্য সংযোজনের কথা জানান তিনি।

এবার এমপিওভুক্তি আবেদন গ্রহণ, সফটওয়্যার তৈরিসহ নানা ক্ষেত্রে নানা অব্যবস্থাপনা ছিল। এখনও যারা যাচাই করছেন তারাও সঠিকভাবে করছেন বা করতে পারছেন বলে সংশয় রয়েছে। প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে দুর্নীতি বা আমলাদের অদক্ষতার কথা স্বীকার না করলেও একজন অতিরিক্ত সচিবকে বদলি করা হয়েছে। 

বর্তমানে অনলাইনে এমপিওর জন্য আবেদন করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও-সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রতিষ্ঠান প্রধান অনলাইনে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আপলোড করবেন। এরপর তা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করেন। তার মতে, কাগজপত্র ঠিক থাকলে, তা তিনি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। তিনি ঐ কাগজপত্রে সন্তুষ্ট হলে তা পাঠাবেন আঞ্চলিক উপপরিচালকের কাছে। উপপরিচালক তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এমপিও-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপস্থাপন করবেন। সেখানে তা চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে শিক্ষকদের কাগজপত্র চারটি ধাপে যাচাই-বাছাই হয়। এ কারণে প্রত্যেকটি ধাপেই ধরনা দিতে হবে। এই সুযোগে অনেকেই হয়রানি এবং ঘুষ বাণিজ্যের শিকার হন। ঘুষ না দিলে ফাইল নিষ্পত্তি হয় না এমন অভিযোগ প্রায় সব শিক্ষকের। এই চার ধাপে নিষ্পত্তি হতে কখনো ছয় মাসেও হয় না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন, এভাবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনলাইনে আবেদন নেওয়া হলে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। তাই তারা সনাতনী পদ্ধতিরও দাবি তুলছেন।

তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় মাউশি অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠানের কোড সৃষ্টি করা হয় প্রতি বেজোড় মাসের এমপিও কমিটির কেন্দ্রীয় বৈঠকে। সেই হিসাবে সামনে বেজোড় মাস আছে মার্চ এবং মে। যদি আগামী সপ্তাহে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা সম্ভব হয় এবং অন্যান্য কাজ ঠিকঠাক মতো চলে তবে মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানগুলো কোড নম্বর পাবে, যে কোডে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর অর্থ যাবে। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওর জন্য আবেদন করতে হবে।

গত ২৩ অক্টোবর এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৯ বছর পর সরকার ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। এর আগে ২০১০ সালে একসঙ্গে ১ হাজার ৬২৬টি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিও দেওয়া হয়। এমপিওভুক্ত ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ও কলেজ ১ হাজার ৬৫১টি, বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসা ১ হাজার ৭৯টি। নতুন এই এমপিওভুক্তির কারণে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগে মোট ৮৮১ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063819885253906