নতুন বই পেলেন ছয় বৃদ্ধ ছাত্র

দিনাজপুর প্রতিনিধি |

শিক্ষার জন্য বয়স কোনো বিষয় নয়—এই সত্য ফের প্রতিষ্ঠিত করলেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ১১ জন বৃদ্ধ। ইউনিফর্ম পরে, নিয়ম মেনে স্কুলে যাচ্ছেন তাঁরা।

নাতি-নাতনির বয়সী শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রহণ করছেন প্রাথমিক শিক্ষা। চোখ থাকতে অন্ধ এবং টিপসই দিতে চান না বলেই শেষ বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সোমবার নতুন বই নিতে তাঁদের ছয়জন যোগ দিয়েছেন পাঠ্যপুস্তক উৎসবে।
এই ১১ শিক্ষার্থী হলেন—নবাবগঞ্জ উপজেলার আমবাগান এলাকার বাদশা মিয়া (৫১), বদিয়াজ্জামান (৬৩) ও আসাদ মিয়া (৪৭), মাহমুদপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ (৫৬), ইলিয়াস মিয়া (৭১) ও সিদ্দিক মিয়া (৬৬), মেম্বারপাড়া এলাকার শাহিনুর আলম (৪৭) ও আব্দুল লতিফ (৪৯), সোনারপাড়া এলাকার লাল মিয়া (৪৭), মগোরপাড়া গ্রামের বজলুর রশিদ (৫৪) ও আব্দুর রাজ্জাক (৬০)।

এর মধ্যে সিদ্দিক মিয়া, বজলুর রশিদ, শাহিনুর আলম, আব্দুল লতিফ, বাদশা মিয়া ও বদিয়াজ্জামান পাস করে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছেন।

গতকাল সকালে নবাবগঞ্জের মাহমুদপুর ইউনিয়নে মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন বই নিচ্ছেন ওই ছয়জন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁরা। স্কুলের নিয়ম মেনে গত এক বছর ক্লাস করছেন। শিশু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন শরীরচর্চাসহ বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে।

গলা ছেড়ে শিশুদের সঙ্গে গেয়েছেন জাতীয় সংগীত।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে তাঁরা বলেন, ‘পাস করা এবং নতুন ক্লাসের বই পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। মনে হচ্ছে, আবার যেন শিশু বয়সে ফিরে গেছি। শিক্ষকরা অনেক যত্ন করে আমাদের পড়ালেখা করান। আমরা এই স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। ’

৬২ বছর বয়সী বদিয়াজ্জামান জানান, খুব সকালে তাঁর স্ত্রী খাবার তৈরি করেন আর নাতি তাঁকে স্কুলে যেতে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। তাঁর নাতিও ওই স্কুলে লেখাপড়া করে। ভাত খেয়েই নাতিকে নিয়ে চলে যান স্কুলে। এই বয়সে স্কুলে যেতে পেরে তিনি খুব খুশি। তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরাও খুশি।

হারুনুর রশিদ জানান, অসচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোটবেলায় লেখাপড়া করতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। সাক্ষরজ্ঞান অর্জন করতেই এই বয়সে তাঁরা স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। বিষয়টি এলাকার মানুষ ভালোভাবে নিয়ে তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেকে তাঁদের সঙ্গে স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রথমে দুজন বৃদ্ধ তাঁর সঙ্গে কথা বলে স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা জানান। জানুয়ারি মাসে তিনি তাঁদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে গত বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন একসঙ্গে সাতজন ভর্তি হন। এর তিন দিন পর ভর্তি হন আরো চারজন। এই শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসছেন এবং তাঁদের শেখার আগ্রহ প্রবল।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেনাজুল হায়দার জানান, বয়স বেশি হওয়ায় ভর্তি নেওয়া যাবে কি না এ নিয়ে প্রথমে সমস্যা হয়। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি জানান, ছয় বছরের বেশি বয়সীদের ভর্তির নিয়ম আছে। বয়স বেশি হলেও ভর্তিতে বাধা নেই। তখন ওই বৃদ্ধদের ভর্তি করে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ছয়জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছেন। বাকি পাঁচজন আবারও প্রথম শ্রেণিতে থাকতে চান বলে পরীক্ষায় অংশ নেননি। তবে তাঁরা নিয়মিত স্কুলে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, ‘নিরক্ষরতা দূর করতে বয়স্করা স্কুলে আসছেন, এটি অনেক আশাব্যঞ্জক। আমরা তাঁদের সফলতা কামনা করছি। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066070556640625