নতুন বিধিমালায় ক্ষুব্ধ প্রাথমিক শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য 'সমন্বিত নিয়োগবিধিমালা-২০২০' এর খসড়াটি প্রত্যাখ্যান করেছে প্রাথমিক শিক্ষকরা। এই বিধি বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকরা আর কখনও অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। গত কয়েকদিনে তাই এই নিয়োগবিধি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা।

খসড়া নিয়োগবিধিতে বলা হয়েছে, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২৫৮৯টি পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। নিয়োগে ৮০ শতাংশ পদ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং বাকি ২০ ভাগ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বুঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নূ্যনতম ৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে, বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে উন্মুক্ত প্রার্থীদের বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপর একটি পদ 'ইনস্ট্রাক্টর'। উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগে মোট পদের ৩৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৬৫ ভাগ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করার কথা বলা হয়েছে নতুন নিয়োগ বিধির খসড়ায়। তবে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। পদোন্নতির জন্য উপজেলা/থানা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর/পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নূ্যনতম ৭ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির বিএডসহ দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। সরাসরি নিয়োগে বয়স ৩০ বছর, তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের বয়সের কোনো উল্লেখ নেই।

ইউআরসির সহকারী ইনস্ট্রাক্টরের ৫০৫টি পদে নিয়োগও একই নিয়মে হবে। তবে এখানেও বিভাগীয় প্রার্থী বলতে শুধু প্রধান শিক্ষকদের বোঝানো হয়েছে। দেশের ৬৭টি পিটিআইয়ে ইনস্ট্রাক্টর সাধারণ ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ইনস্ট্রাক্টর পদেও প্রাথমিক শিক্ষকদের বিভাগীয় পদোন্নতির বিধান রাখা হয়নি।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) পর্যন্ত হতে পারতেন। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগবিধি-১৯৮৫ এর ফলে শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পিএসসির নিয়োগবিধি ১৯৯৪ জারি হলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারতেন।

২০০৩ সালের সরকারি গেজেটেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী বলতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের কথা বলা হয়েছে এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের বোঝানো হয়েছে। সর্বশেষ নিয়োগ পর্যন্ত এভাবেই চলছে।

অথচ প্রস্তাবিত নতুন সমন্বিত নিয়োগবিধিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে এই বিধি বাস্তবায়িত হলে সহকারী শিক্ষকরা আর কখনও অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। যে কোনো সময় এই নিয়োগবিধি মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন এই নিয়োগবিধি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের উচ্চপদে পদোন্নতি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। নিয়োগবিধিটির বিভিন্ন দিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পর সহকারী শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

ঢাকার শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, এ নিয়োগবিধি তারা মানেন না। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি সহকারী শিক্ষক মাস্টার্স পাস। অনেকে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু এ নিয়োগবিধির কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আর আগ্রহ দেখাবেন না।

খুলনার সহকারি শিক্ষক মৌসুমী আক্তার বলেন, পদোন্নতির নতুন নিয়ম কার্যকর হলে মেধাবীরা প্রাথমিক শিক্ষায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।  নতুন নিয়োগবিধিতে পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টর ও সহকারী ইনস্ট্রাক্টর পদে বিএড ডিগ্রির কথা বলা হয়েছে। অথচ প্রথমিক শিক্ষকদের বিএড করার সুযোগ খুব নেই। শিক্ষকদের বিএড করার সুযোগ না দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় এই যোগ্যতা চাওয়া হয় কার স্বার্থে?

বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো: সিদ্দিকুর রহমান বলেন,  মেধাবীদের ধরে রাখতে হলে তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পদোন্নতির সুযোগ দিতে হবে। সব পদে যোগ্যতা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শতভাগ পদোন্নতি দেয়া উচিত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048079490661621