ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি আর্থিক সহায়তা নিয়ে কিছু কথা

অধ্যক্ষ মো. আবুল বাশার হাওলাদার |

গত ২৩মে সরকারি একটি চিঠিতে সারাদেশের এমপিওভুক্ত ও ইআইআইএনধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্যাদি জরুরিভিত্তিতে হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ ছিল, শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য হালনাগাদ করার জন্যই এ উদ্যোগ। তবে বিকাশ/ নগদ/রকেট/শিওর ক্যাশ নম্বর চাওয়ায় সকলের ধারণা পাল্টে যায়। তাছাড়া জেলা প্রশাসকরা এখানে সম্পৃক্ত থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক সহায়তা পেতে যাচ্ছেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাড়াহুড়ো করে প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যাদি যথানিয়মে প্রেরণ করেন। তবে সংশ্লিষ্ট  অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল, কোন ধরণের শিক্ষক-কর্মচারী এই সহায়তার আওতায় আসবেন। এ প্রশ্নের অবসান ঘটে পরবর্তীতে  ৯টি শর্ত দিয়ে আরও একটি চিঠি মেইল করার পর। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত চিঠিতে বিষয়টি মোটামুটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন, প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক -কর্মচারীরা এই সহায়তা পাবেন না। যে প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নম্বর নেই তারাও পাবেন না।

বৈশ্বিক এ মহাদুর্যোগে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের বাঁচা-মরার এ লড়াইয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, যার যতদিন  সহায়তা প্রয়োজন ততদিন সহায়তা দিবেন।

এমপিও নীতিমালার আলোকে এ সহায়তার আওতা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন, এমপিও নীতিমালা কী হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাবেন? বুভুক্ষু মানুষের চোখের জল ঝরাবেন? মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব করবেন? আমি ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ করব না, আপনাদের এমপিও নীতিমালার ফাঁদে পড়েই চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন, প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্ম হয়েছে। আপনাদের অনুমোদন না থাকলেও তারা কিন্তু অনুমোদিত নাগরিক। তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক  অধিকার আছে। 

ইআইআইএনধারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্থাপনের অনুমতি, পাঠদানের অনুমতির জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াধীন আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাছাড়া  ইআইআইএনধারী প্রতিষ্ঠান নানা কারণে তাদের নম্বর হারিয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনবিহীন অবস্থায় আর্থিক মহাসংকটে আছেন। তবে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান যেগুলো ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত এবং শিক্ষা বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের কথা আমি বলছি না। বরঞ্চ এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পান কি না এ ব্যাপারে সরকারের মনিটরিং থাকা প্রয়োজন।

মনে করা হচ্ছে,শিগগিরই ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেতে যাচ্ছেন। তবে কত টাকা পাচ্ছেন তা এখনো জানা যায়নি। সম্মানজনক ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার অপেক্ষায় আছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা না বললেই নয়, সারাদেশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়ম মেনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত এদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এভাবেই। এসব প্রতিষ্ঠান বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকটের মধ্যে আছেন। এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা দানের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার দাবি করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিকতা ও আন্তরিকতার প্রতি শিক্ষকসমাজ কৃতজ্ঞ। দেশের ক্রান্তিলগ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক-কর্মচারীদের পাশে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন সেই প্রত্যাশা করছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক : অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003101110458374