করোনার ছোবলে চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়া সব নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীকে এককালীন আর্থিক প্রণোদনা দিতে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ বরাদ্দ চাওয়া হলে তা দিতে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে, এখনও শিক্ষকদের তালিকা চূড়ান্ত হয়নি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন মেলেনি।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) দেয়া তথ্য অনুসারে তালিকায় শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে এমন চিন্তা থেকে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে তালিকা যাচাই-বাছাই করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগ। তবে কতজন শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিক সুবিধার আওতায় আসছেন তা এখনও চূড়ান্ত না হলেও এ সংখ্যা এক লাখের অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।এদিকে উদ্যোগ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এখনও চূড়ান্ত না হওয়ায় এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিতে চায় না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তাদের উদ্যোগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বলেছেন, ‘আমরা কাজ গুছিয়ে রাখছি। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রণোদনা দিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে নন-এমপিও শিক্ষকদের তালিকাও চাওয়া হয়েছে। সবই সত্যি। কিন্তু এ নিয়ে এখনও কথা বলার সময় হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি হলেই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে। অনেক টাকার বিষয়। তাই সরকারকেও অনেক কিছু চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’।
শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের যথাযথ অনুমোদন পাওয়া সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নন তারা পাবেন এ সুবিধা। যার পরিমাণ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা হতে পারে। সব মিলিয়ে এক শ’ ১০ কোটি টাকারও বেশি প্রয়োজন হবে।
ব্যানবেইসের তথ্য অনুসারে শিক্ষক-কর্মচারী ছিলেন এক লাখ ৮৫ হাজারেরও বেশি। যাচাই-বাছাই করলে সংখ্যা আরও কমবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বহু প্রতিষ্ঠান কোন মতে স্বীকৃতি নিয়ে চললেও আর্থিক ও শিক্ষার্থী সঙ্কটে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও অন্যত্র চলে যান। ফলে স্বীকৃতির সময় যে জনবল যেখানে হয় পরবর্তীতে তারা অনেকেই থাকেন না।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান থেকেই নামমাত্র সম্মানী পান। আবার কেউ কিছুই পান না। তারা মূলত টিউশনি, বই লেখা ইত্যাদি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চলমান লকডাউনে আয়ের সেসব রাস্তা বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। গত বছর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে এখন সেই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিচ্ছে সরকার। বেতন ভাতা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে এমপিওর দিন থেকেই সরকারী সুবিধা তারা পাচ্ছেন।
কিন্তু যেহেতু অধিকাংশ আবেদনকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা যায়নি সেহেতু সেখানকার শিক্ষক-কর্মচারীরা এই করোনার মধ্যে পড়েছেন মহাসঙ্কটে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা কোন টাকা পাচ্ছেন না। এসব সমস্যার কথা চিন্তা করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, যে টাকা দেয়া হবে তার পরিমাণ হয়ত বেশি হবে না। তবে কিছুটা পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ।
মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদেরও প্রণোদনার আওতায় আনার চিন্তা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নতুন এমপিও পেয়েছে দুই হাজার ৭৩৭টি। এছাড়া একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরে রয়েছে আর দুই হাজারেরও বেশি নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।